মাহতাব হোসেন
রামপুরা ব্রিজ পার হয়ে বনশ্রীর রাস্তায় ঢুকতেই এক নারী হাত পেতে দিলেন। মলিন চেহারা, শরীরে ছেঁড়া ময়লা শাড়ি জড়িয়ে মাথা ঢাকার চেষ্টা করছেন। ভিক্ষুক, কিন্তু লাজুকতাও রয়েছে। মানিব্যাগ বের করে খেয়াল করলাম কোনো খুচরো পয়সা নেই। খুচরো নেই বলেই হাতকে পাশ কাটিয়ে রিকশায় উঠে পড়লাম।
‘কই যাইবেন?’
‘ডি ব্লক!’
রিকশাওয়ালা রোদের তেজের কথা উল্লেখ করে ১০ টাকা বেশি দাবি করলেন। বললাম দেব। ভিক্ষুক নারীকে টাকা দিতে না পারায় একটা খচখচানি কাজ করছিল, আবার এটাও মনে হচ্ছিল যে তাকে এর আগে কোথাও যেন দেখেছি। কিন্তু মনে করতে পারলাম না। হয়তো এর আগেও ওই নারীকে ঢাকার কোথাও ভিক্ষা করতে দেখেছি, হয়তো সে সময়ই এভাবে হাত পেতেছিল—পাঁচ-দশ টাকা দিয়েছি। ডেমরাগামী একটা বাস এমনভাবে রিকশার পাশ দিয়ে শাঁ করে ছুটে গেল, নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে রিকশা আরেকটু হলে খালেই ফেলে দিয়েছিল!
অফিসে ঢুকেই বোতল খুলে পানি খেলাম। শার্টের নিচের গেঞ্জি ঘামে চিটচিটে হয়ে আছে। ডেস্কে বসে কম্পিউটার চালু করে গত দিনের আর্টিকেলগুলোতে চোখ বোলাচ্ছিলাম। কিন্তু মনের একটা অংশ রামপুরা ব্রিজে চলে যাচ্ছে বারবার। আর্টিকেলগুলো আজ ছেড়ে দিতে হবে। লাবণী এসে ডেস্ক ঘেঁষে দাঁড়ালেন।
নতুন সহকর্মী।
‘কিছু বলবেন?’
‘স্যার, আমার আজ একটু কাজ আছে। একটু আর্লি বেরোতে হবে। মানে লাঞ্চ আওয়ারে, আপনি যদি একটু ফেবার করেন?’
মাস দেড়েক আগে জয়েন করেছে মেয়েটা। ছিপছিপে গড়ন। সাজ দেখলে কট করে সহজেই চোখে লাগে।
‘আমি কীভাবে ফেবার করব?’
‘শাহীন স্যার যদি জিজ্ঞেস করেন, তাহলে বলবেন যে...মানে আপনাকে একটু হ্যান্ডেল করতে হবে স্যার, প্লিজ।’
কিছু না বলে মনিটরে চোখ রাখলাম। এখনকার অনেক ছেলেমেয়েই দেখছি চাকরিটাকে ছেলেখেলা মনে করে। জয়েন করেই ছুটিছাটা, বছর না ঘুরতেই প্রমোশনের আশায় উন্মুখ হয়ে থাকে।
‘স্যার, প্লিজ, দেখবেন!’
চোখ তুলে একবার তাকালাম। আসলে বুঝতে পারছি না, কী বলব। চলে গেলেন লাবণী। একটা আর্টিকেল খুলে পড়ে যাচ্ছি। মনঃসংযোগ ঘটছে না। রামপুরা ব্রিজের ওই নারীকে কোথায় যেন দেখেছি, কোথায় দেখেছি! মাথার ভেতরে একই কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। ইদানীং এক চিন্তার সঙ্গে আরেকটা পাক খেলেই কোনোটাতেই মন দিতে পারি না। মাথার ভেতর সাদা মেঘ ঘুরে বেড়ায়। কম্পিউটার লক করে বারান্দায় চলে এলাম। আন অফিশিয়াল স্মোকিং জোন এই বারান্দা। চন্দন সাহেব সিগারেট টানছিলেন। আমাকে দেখেই একগাল হেসে বললেন, ‘আল আমিন সাহেবকে মনে হয় চিন্তিত মনে হচ্ছে?’
আমি তাকিয়ে হাসলাম। বললাম, ‘না, তেমন কিছু না।’
‘যা-ই হোক, অনর্থক চিন্তা করবেন না। কী দরকার হাইপার টেনশন ডেকে আনার।’
আরেকবার হাসলাম। চন্দন সাহেব সিগারেটের গোড়া অ্যাশট্রেতে ফেলে চলে গেলেন।
পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ধরিয়ে দুটো টান দিতেই মাথার ভেতরের মেঘ সরে গেল। স্পষ্ট মনে পড়ে গেল। সিগারেটটা নিভিয়ে, অ্যাশট্রেতে ফেলে বেরিয়ে পড়লাম। অফিসের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা রিকশায় উঠেই বললাম, ‘রামপুরা ব্রিজ।’
রিকশা ডি ব্লকের ৪ নম্বর রাস্তা থেকে বেরিয়ে ছুটছে। সম্ভবত তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি। প্রতিদিন ব্যাগ পিঠে নিয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে উঠে তারপর রেললাইন ধরে স্কুল যাই। স্কুলে যাওয়ার সময় রেললাইন, ট্রেন—এসব নানা চিন্তা খেলা করে, কোথা থেকে এত মানুষ আসে, কোথায় চলে যায়! একদিন কৌতূহলবশত প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা খুলনাগামী রকেট মেইলে চড়ে বসলাম। পুরো গাড়িজুড়ে লোক গিজগিজ করছে। হকারের চিল্লাচিল্লি। ভারত থেকে লবণ-চিনি আনা ব্ল্যাকারদের হট্টগোল। এক লোক বড় ডালায় লম্বা লম্বা পাউরুটি বিক্রি করছে। আব্দুলপুর, নওগাঁয় ধান কাটতে আসা মানুষেরা সেসব কিনে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে। একটা লম্বা হুইসিল দিয়ে ট্রেন ছেড়ে দিল।
পার্বতীপুর থেকে ট্রেন ছুটে চলল খুলনার দিকে। ফুলবাড়ী, বিরামপুর পেরিয়ে গেল। ভয়ে জড়সড় হয়ে গেছি। পার্বতীপুর থেকে ট্রেনের দূরত্ব যতই বাড়ছে, ততই বুকের ভেতর ভয় জমাট বাঁধছে। গলা শুকিয়ে গেছে। কেন ট্রেনে উঠে পড়েছিলাম, নিজের ওপরেই রাগ লাগছিল। কোথায় নামব, ফিরব কীভাবে, বুঝতে পারছিলাম না। হিলিতে ট্রেন থামতেই সাহস করে নেমে পড়লাম। একসঙ্গে অনেক মানুষ নেমে পড়ল। এতবার নাম শুনেছি। প্রথমবার দেখলাম হিলি। প্ল্যাটফর্মের কোনায় সিমেন্টের পাতানো বেঞ্চে বসে আছি। আমার সামনে এক মেয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘তুই এইখানে ক্যান?’
ভয় পেয়ে গেলাম। মেয়েটার নাম নার্গিস। আমাদের পাশের মহল্লায় বাড়ি। সে হিলি পার হয়ে ইন্ডিয়া থেকে চিনি এনে পার্বতীপুর বাজারে বিক্রি করে। ভয়ে কিছুই বললাম না।
‘তুই কার সাথে আসছিস?’
‘একা।’
‘একলা? যাবি কীভাবে তাইলে, ট্রেন
তো বিকেলে?’
আমাকে নিয়ে নার্গিস চিন্তায় পড়ে গেল। তারপর ইশারা করল তার সঙ্গে যেতে। কোথায় কেন, কিছুই জিজ্ঞেস করলাম না। স্টেশনের পেছন দিকটাই ভারত।
স্টেশনের পেছনের দেয়ালটাই সীমানা। দক্ষিণ দিকের প্ল্যাটফর্মের শেষ মাথায় এসে বলল, ‘কেউ যদি কিছু জিজ্ঞেস করে কিছুই বলবি না। বুঝছিস?’
আমি মাথা নাড়লাম। নার্গিস আমাকে নিয়ে একটা জঙ্গলের পাশ দিয়ে ঢুকে পড়ল ইন্ডিয়ায়। হেঁটে যাচ্ছি। একজন টহলদার বিএসএফ জওয়ান কোত্থেকে উদয় হলো। ভয়ে বুকটা ধক করে উঠল। জিজ্ঞেস করল কী যেন। নার্গিস বলল, ‘মেরা ছোটা ভাই, ঘুমনে লে আয়া।’
জওয়ান হাসল। হাঁটতে হাঁটতে আমরা একটা বাজারে চলে এলাম। একটা দোকানে গিয়ে নার্গিস জামার ভেতর থেকে বস্তা বের করে দিল। হিন্দিতে কী যেন বলল। তারপর বাজারের মাঝখানে চলে এল। আমি তাকে অনুসরণ করে যাচ্ছি। একটা চাটাইঘেরা হোটেলে ডাল-পরোটা অর্ডার করল। খাওয়া শেষে, আরেকটা দোকানে এসে অনেকগুলো চকলেট কিনে ব্যাগে ভরে দিয়ে বলল, ‘এইটা ইন্ডিয়া, এইখানে সব কম দাম, বুঝলি?’
নার্গিসের সঙ্গে গোটা বাজার ঘুরলাম। কত-কী দেখলাম। ওর সঙ্গেই বিকেলের ট্রেনে পার্বতীপুর ফিরেছিলাম। বাড়িতে কেউ জানতেও পারেনি কোথায় গিয়েছিলাম। মাকে বলেছিলাম স্কুল শেষে ফুটবল খেলেছি। নার্গিসও আমাদের বাসায় কিছু বলেনি। নার্গিসের প্রতি এক গভীর কৃতজ্ঞতাবোধ আমাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল দীর্ঘ বছর। মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম বড় হলে ওকে আমি কিছু একটা উপহার দেব। তার দুই-তিন বছর পরেই শুনেছিলাম নার্গিস এক ছেলেকে বিয়ে করে ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করতে গিয়েছিল। তারপর নার্গিসকে একেবারে ভুলে গিয়েছিলাম।
রামপুরা ব্রিজের আগে রিকশা থেমে ভাড়া মিটিয়ে দৌড়ে এলাম যেখানে নার্গিস ভিক্ষা করছিল। না, সেখানে নেই। গোটা রামপুরা ব্রিজ খুঁজে মেরুল পর্যন্ত চলে এলাম—কোথাও নেই নার্গিস!
রামপুরা ব্রিজ পার হয়ে বনশ্রীর রাস্তায় ঢুকতেই এক নারী হাত পেতে দিলেন। মলিন চেহারা, শরীরে ছেঁড়া ময়লা শাড়ি জড়িয়ে মাথা ঢাকার চেষ্টা করছেন। ভিক্ষুক, কিন্তু লাজুকতাও রয়েছে। মানিব্যাগ বের করে খেয়াল করলাম কোনো খুচরো পয়সা নেই। খুচরো নেই বলেই হাতকে পাশ কাটিয়ে রিকশায় উঠে পড়লাম।
‘কই যাইবেন?’
‘ডি ব্লক!’
রিকশাওয়ালা রোদের তেজের কথা উল্লেখ করে ১০ টাকা বেশি দাবি করলেন। বললাম দেব। ভিক্ষুক নারীকে টাকা দিতে না পারায় একটা খচখচানি কাজ করছিল, আবার এটাও মনে হচ্ছিল যে তাকে এর আগে কোথাও যেন দেখেছি। কিন্তু মনে করতে পারলাম না। হয়তো এর আগেও ওই নারীকে ঢাকার কোথাও ভিক্ষা করতে দেখেছি, হয়তো সে সময়ই এভাবে হাত পেতেছিল—পাঁচ-দশ টাকা দিয়েছি। ডেমরাগামী একটা বাস এমনভাবে রিকশার পাশ দিয়ে শাঁ করে ছুটে গেল, নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে রিকশা আরেকটু হলে খালেই ফেলে দিয়েছিল!
অফিসে ঢুকেই বোতল খুলে পানি খেলাম। শার্টের নিচের গেঞ্জি ঘামে চিটচিটে হয়ে আছে। ডেস্কে বসে কম্পিউটার চালু করে গত দিনের আর্টিকেলগুলোতে চোখ বোলাচ্ছিলাম। কিন্তু মনের একটা অংশ রামপুরা ব্রিজে চলে যাচ্ছে বারবার। আর্টিকেলগুলো আজ ছেড়ে দিতে হবে। লাবণী এসে ডেস্ক ঘেঁষে দাঁড়ালেন।
নতুন সহকর্মী।
‘কিছু বলবেন?’
‘স্যার, আমার আজ একটু কাজ আছে। একটু আর্লি বেরোতে হবে। মানে লাঞ্চ আওয়ারে, আপনি যদি একটু ফেবার করেন?’
মাস দেড়েক আগে জয়েন করেছে মেয়েটা। ছিপছিপে গড়ন। সাজ দেখলে কট করে সহজেই চোখে লাগে।
‘আমি কীভাবে ফেবার করব?’
‘শাহীন স্যার যদি জিজ্ঞেস করেন, তাহলে বলবেন যে...মানে আপনাকে একটু হ্যান্ডেল করতে হবে স্যার, প্লিজ।’
কিছু না বলে মনিটরে চোখ রাখলাম। এখনকার অনেক ছেলেমেয়েই দেখছি চাকরিটাকে ছেলেখেলা মনে করে। জয়েন করেই ছুটিছাটা, বছর না ঘুরতেই প্রমোশনের আশায় উন্মুখ হয়ে থাকে।
‘স্যার, প্লিজ, দেখবেন!’
চোখ তুলে একবার তাকালাম। আসলে বুঝতে পারছি না, কী বলব। চলে গেলেন লাবণী। একটা আর্টিকেল খুলে পড়ে যাচ্ছি। মনঃসংযোগ ঘটছে না। রামপুরা ব্রিজের ওই নারীকে কোথায় যেন দেখেছি, কোথায় দেখেছি! মাথার ভেতরে একই কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। ইদানীং এক চিন্তার সঙ্গে আরেকটা পাক খেলেই কোনোটাতেই মন দিতে পারি না। মাথার ভেতর সাদা মেঘ ঘুরে বেড়ায়। কম্পিউটার লক করে বারান্দায় চলে এলাম। আন অফিশিয়াল স্মোকিং জোন এই বারান্দা। চন্দন সাহেব সিগারেট টানছিলেন। আমাকে দেখেই একগাল হেসে বললেন, ‘আল আমিন সাহেবকে মনে হয় চিন্তিত মনে হচ্ছে?’
আমি তাকিয়ে হাসলাম। বললাম, ‘না, তেমন কিছু না।’
‘যা-ই হোক, অনর্থক চিন্তা করবেন না। কী দরকার হাইপার টেনশন ডেকে আনার।’
আরেকবার হাসলাম। চন্দন সাহেব সিগারেটের গোড়া অ্যাশট্রেতে ফেলে চলে গেলেন।
পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ধরিয়ে দুটো টান দিতেই মাথার ভেতরের মেঘ সরে গেল। স্পষ্ট মনে পড়ে গেল। সিগারেটটা নিভিয়ে, অ্যাশট্রেতে ফেলে বেরিয়ে পড়লাম। অফিসের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা রিকশায় উঠেই বললাম, ‘রামপুরা ব্রিজ।’
রিকশা ডি ব্লকের ৪ নম্বর রাস্তা থেকে বেরিয়ে ছুটছে। সম্ভবত তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি। প্রতিদিন ব্যাগ পিঠে নিয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে উঠে তারপর রেললাইন ধরে স্কুল যাই। স্কুলে যাওয়ার সময় রেললাইন, ট্রেন—এসব নানা চিন্তা খেলা করে, কোথা থেকে এত মানুষ আসে, কোথায় চলে যায়! একদিন কৌতূহলবশত প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা খুলনাগামী রকেট মেইলে চড়ে বসলাম। পুরো গাড়িজুড়ে লোক গিজগিজ করছে। হকারের চিল্লাচিল্লি। ভারত থেকে লবণ-চিনি আনা ব্ল্যাকারদের হট্টগোল। এক লোক বড় ডালায় লম্বা লম্বা পাউরুটি বিক্রি করছে। আব্দুলপুর, নওগাঁয় ধান কাটতে আসা মানুষেরা সেসব কিনে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে। একটা লম্বা হুইসিল দিয়ে ট্রেন ছেড়ে দিল।
পার্বতীপুর থেকে ট্রেন ছুটে চলল খুলনার দিকে। ফুলবাড়ী, বিরামপুর পেরিয়ে গেল। ভয়ে জড়সড় হয়ে গেছি। পার্বতীপুর থেকে ট্রেনের দূরত্ব যতই বাড়ছে, ততই বুকের ভেতর ভয় জমাট বাঁধছে। গলা শুকিয়ে গেছে। কেন ট্রেনে উঠে পড়েছিলাম, নিজের ওপরেই রাগ লাগছিল। কোথায় নামব, ফিরব কীভাবে, বুঝতে পারছিলাম না। হিলিতে ট্রেন থামতেই সাহস করে নেমে পড়লাম। একসঙ্গে অনেক মানুষ নেমে পড়ল। এতবার নাম শুনেছি। প্রথমবার দেখলাম হিলি। প্ল্যাটফর্মের কোনায় সিমেন্টের পাতানো বেঞ্চে বসে আছি। আমার সামনে এক মেয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘তুই এইখানে ক্যান?’
ভয় পেয়ে গেলাম। মেয়েটার নাম নার্গিস। আমাদের পাশের মহল্লায় বাড়ি। সে হিলি পার হয়ে ইন্ডিয়া থেকে চিনি এনে পার্বতীপুর বাজারে বিক্রি করে। ভয়ে কিছুই বললাম না।
‘তুই কার সাথে আসছিস?’
‘একা।’
‘একলা? যাবি কীভাবে তাইলে, ট্রেন
তো বিকেলে?’
আমাকে নিয়ে নার্গিস চিন্তায় পড়ে গেল। তারপর ইশারা করল তার সঙ্গে যেতে। কোথায় কেন, কিছুই জিজ্ঞেস করলাম না। স্টেশনের পেছন দিকটাই ভারত।
স্টেশনের পেছনের দেয়ালটাই সীমানা। দক্ষিণ দিকের প্ল্যাটফর্মের শেষ মাথায় এসে বলল, ‘কেউ যদি কিছু জিজ্ঞেস করে কিছুই বলবি না। বুঝছিস?’
আমি মাথা নাড়লাম। নার্গিস আমাকে নিয়ে একটা জঙ্গলের পাশ দিয়ে ঢুকে পড়ল ইন্ডিয়ায়। হেঁটে যাচ্ছি। একজন টহলদার বিএসএফ জওয়ান কোত্থেকে উদয় হলো। ভয়ে বুকটা ধক করে উঠল। জিজ্ঞেস করল কী যেন। নার্গিস বলল, ‘মেরা ছোটা ভাই, ঘুমনে লে আয়া।’
জওয়ান হাসল। হাঁটতে হাঁটতে আমরা একটা বাজারে চলে এলাম। একটা দোকানে গিয়ে নার্গিস জামার ভেতর থেকে বস্তা বের করে দিল। হিন্দিতে কী যেন বলল। তারপর বাজারের মাঝখানে চলে এল। আমি তাকে অনুসরণ করে যাচ্ছি। একটা চাটাইঘেরা হোটেলে ডাল-পরোটা অর্ডার করল। খাওয়া শেষে, আরেকটা দোকানে এসে অনেকগুলো চকলেট কিনে ব্যাগে ভরে দিয়ে বলল, ‘এইটা ইন্ডিয়া, এইখানে সব কম দাম, বুঝলি?’
নার্গিসের সঙ্গে গোটা বাজার ঘুরলাম। কত-কী দেখলাম। ওর সঙ্গেই বিকেলের ট্রেনে পার্বতীপুর ফিরেছিলাম। বাড়িতে কেউ জানতেও পারেনি কোথায় গিয়েছিলাম। মাকে বলেছিলাম স্কুল শেষে ফুটবল খেলেছি। নার্গিসও আমাদের বাসায় কিছু বলেনি। নার্গিসের প্রতি এক গভীর কৃতজ্ঞতাবোধ আমাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল দীর্ঘ বছর। মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম বড় হলে ওকে আমি কিছু একটা উপহার দেব। তার দুই-তিন বছর পরেই শুনেছিলাম নার্গিস এক ছেলেকে বিয়ে করে ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করতে গিয়েছিল। তারপর নার্গিসকে একেবারে ভুলে গিয়েছিলাম।
রামপুরা ব্রিজের আগে রিকশা থেমে ভাড়া মিটিয়ে দৌড়ে এলাম যেখানে নার্গিস ভিক্ষা করছিল। না, সেখানে নেই। গোটা রামপুরা ব্রিজ খুঁজে মেরুল পর্যন্ত চলে এলাম—কোথাও নেই নার্গিস!
চারুশিল্প হচ্ছে মানুষের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। একটি ছবি একটি বিপ্লবের উন্মেষ ঘটাতে পারে। ছবি শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিপ্লবের বার্তাও নিয়ে আসে।
৭ দিন আগেআপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, এই বই পড়লে তারুণ্যশক্তিকে অনুভব করবেন, অনুপ্রাণিত হবেন। নতুন শুরুর একটা তাগিদ পাবেন। এই তরুণদের প্রত্যেকের মতো আপনিও বলে উঠবেন—সব সম্ভব! এই বইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম নেওয়া অবহেলিত অবস্থা থেকে সাফল্যের শীর্ষে যাওয়ার পথচলার গল্প উঠে এসেছে। প্রায় চার শ পৃষ্ঠার বইটির দাম
১৪ দিন আগেপ্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার দুই যুগের পথচলা (২০০০-২০২৪) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দশ দিনব্যাপী ‘ঐতিহ্য বই উৎসব ২০২৪’ আয়োজন করেছে। আজ ২ নভেম্বর শনিবার বেলা ১১টায় যৌথভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শারমিন আহমদ এবং তরুণ
১৪ দিন আগেদ্য ভেজিটেরিয়ানের পর হান কাঙের পরের উপন্যাস ছিল ‘দ্য উইন্ড ব্লোজ, গো’। এই উপন্যাস লেখার সময়ই ঘটে বিপত্তি! হান অনুভব করেন তিনি আর লিখতে পারছেন না। গত বছর নিজের পঞ্চম উপন্যাস ‘গ্রিক লেসন’ ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হলে স্পেনের এল-পাইস পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছিলেন তিনি।
১০ অক্টোবর ২০২৪