মো. তায়্যিব-উল-ইসলাম সৌরভ
নাজিম সাহেব আয়েশ করে কফিতে চুমুক দিচ্ছেন, পাশে বডিগার্ড জয়নাল তাঁর জন্য টাওয়েল আর পাইপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি কফিটা শেষ করেই পাইপ নেবেন, গুনে গুনে ৬টা টান দেবেন, তারপর টাওয়েল নিয়ে বাথরুমের দিকে যাবেন। প্রতি শনিবার তাঁর এই একই নিয়ম।
নাজিম সাহেবের কফি খাওয়া, বডিগার্ডের তাঁর জন্য অধীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা, পাইপ টানা—এ সবই তাঁর বাসার গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ডজন দুইয়েক লোক আগ্রহ নিয়ে দেখছে। এদের চোখের খিদা মেটানোই নাজিম সাহেবের ঝুল বারান্দায় বসার মূল কারণ; তা না হলে পাইপের চেয়ে বেনসনই তাঁর বেশি পছন্দ। অবশ্য পার্টির সেক্রেটারি বোর্ডের সদস্য হওয়ার পর থেকে তিনি মানুষের সামনে আর সিগারেট খান না, মাঝে মাঝে পাইপ টানেন। তাঁর ভালো লাগে, আরাম লাগে। এই আরাম যে পাইপ টানার আরাম নয়, সেটাও তিনি বোঝেন। বোঝেন বলেই আরামটা তাঁর আরও বেশি লাগে।
নাজিম সাহেব টাওয়েলটা নিয়ে বাথরুমে ঢুকলেন। তাঁর বাথরুম করতে সময় লাগে কিছুটা। তিনি বেনসন টেনে টেনে বড় কাজ সারেন, ততক্ষণে গিজারে পানি গরম হয়। তারপর শেভ করে, হট শাওয়ার নিয়ে তিনি বাথরুম থেকে বের হন। শনিবার দিন তিনি গোসল না করে বের হন না, তাঁর পীর সাহেবের মানা আছে।
মাথা মুছতে মুছতে নাজিম সাহেব জয়নালকে গাড়ি রেডি করার জন্য নিচে খবর দিতে বললেন। তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকায় যাবেন। গেটের সামনে যে ডজন দুইয়েক লোক, তাদের মধ্যে বেশির ভাগই তাঁর সঙ্গে যাবে, দু-একজন অবশ্য গাড়িতে জায়গা না হওয়ায় বাদ পড়বে; প্রতিবারই এমন হয়। গাড়ির সংখ্যা বাড়াতে বাড়াতে এখন চারটা হয়েছে, কিন্তু তা-ও প্রতিবারই কেউ না কেউ বাদ পড়েই। মুশকিল!
সামনে দুইটা আর পেছনে দুইটা মাইক্রো নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন নাজিম সাহেব। তিনি আগামীবার পার্টির নমিনেশন চাইবেন, তাই এলাকায় তাঁর প্রভাব পাকাপোক্ত করতেই ঘনঘন এলাকায় যাতায়াত করছেন। তাঁর নমিনেশন যদিও প্রায় নিশ্চিত, তা-ও তিনি রিস্ক নিতে চান না। ইতিমধ্যে অবশ্য তাঁর ক্ষমতার আঁচ লেগেছে অনেক জায়গায়ই। গতবার থানায় গিয়েই তিনি সেটা বুঝতে পেরেছেন। থানাওয়ালা যেভাবে তাঁকে খাতির-যত্ন করল, তিনি তো প্রায় বিব্রত অবস্থায়ই পড়েছিলেন। অবশ্য এলাকার লোকজনও এখন তাঁকে অন্য চোখে দেখে। চেয়ারম্যান-মেম্বার থেকে শুরু করে সবাই তাঁর আসার অপেক্ষায় বসে থাকে। নাজিম সাহেব ব্যাপারটা খুব উপভোগ করেন, তাঁর অনেক ভালো লাগে।
গাড়ির বহর ইস্কাটন পার হতেই মানুষের জটলা। আগের শনিবারগুলোয় এত জটলা থাকত না, কদিন ধরে জ্যাম লেগে যাচ্ছে। টিসিবির গাড়ির পেছনের জটলা দেখতে আগে তাঁর খারাপ লাগত, আজকাল তেমন খারাপ লাগে না। কদিন ধরে তিনি একটা অদ্ভুত ব্যাপার খেয়াল করছেন, টিসিবির লাইনের লোকগুলোর কাপড়-চোপড় বেশ ভালো। হয়তো এ কারণেই এদের দেখতে এত খারাপ লাগে না।
গাড়িতে ড্রাইভার ও নাজিম সাহেব ছাড়া আর একজন আছে, জমির। নাজিম সাহেবের দূর সম্পর্কের আত্মীয় জমির, তিনি তাকে পিএসের চাকরি দিয়েছেন। শিক্ষিত ভদ্র ছেলে সে, চুপচাপ। আগে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করত। কিছুদিন আগে তাঁর কাছে চাকরির জন্য এসেছিল। নাজিম সাহেব ইংরেজিতে একটু কাচা, ইদানীং আবার অনেক চিঠিপত্র আসে তাঁর কাছে, যেগুলো ইংরেজিতে লেখা। সাতপাঁচ না ভেবে তাই তিনি জমিরকে নিজ পিএসের চাকরিটা দিয়ে দিয়েছেন।
‘বুঝলে জমির?’—নাজিম সাহেবের ডাকে ড্রাইভারের পাশের সিট থেকে ঘাড় বাঁকা করে পেছনে তাকায় জমির। ‘দেশ যে এত উন্নত হচ্ছে, লোকে বুঝতে পারে না। কথায় কথায় খালি সরকাররে গালায়। সুশীল ব্যাটাদের তো খাইয়্যা কাম নাই, শালার ব্যাটারা খালি ভুল ধরে। বিদেশিদের টাকা খায় আর গালগপ্প বলে বেড়ায় ব্যাটারা।’ যদিও নাজিম সাহেব সারাক্ষণই এমন খিস্তি করতে থাকেন, তবু জমির অবাক হলো। শনিবার দিন সাধারণত তিনি আজেবাজে কথা বলেন না, তাঁর পীর সাহেবের মানা।
নাজিম সাহেব কোন প্রসঙ্গে বলছেন তার কিছুই না বুঝে জমির বলল ‘জি স্যার!’ নাজিম সাহেব সায় পেয়ে খুশি হলেন। তাঁর গালাগালির ঝুড়ি তিনি একেবারে খুলে দিলেন। সুশীলদের গুষ্টি উদ্ধার করে মিনিট দশেক বক্তব্য দিলেন, জমির শুধু জি স্যার, জি স্যার করতে লাগল। এতক্ষণে অবশ্য জমির প্রসঙ্গটা ধরতে পেরেছে। তাঁর এখন আর ‘জি স্যার, জি স্যার’ করতে ভালো লাগছে না। ‘দেখো না, দেখো কত মানুষ এখানে লাইন ধরে জিনিস কিনছে। বলো কখনো দেখেছ আগে এমন শৃঙ্খলাবদ্ধ লাইন? আর দেখো, এই সব লোকেরা কত ভালো ভালো কাপড় পরা। জুতাগুলো দেখো, ওই যে দেখছ, ওই মেয়েটা। দেখো কী সুন্দর কাপড় পরা। আর এই যে ক্রিকেট ব্যাট হাতে ছেলেটা। কী অদ্ভুত! আগামী পার্টি মিটিংয়ে বলতেই হবে ব্যাপারটা।’ নাজিম সাহেব বকবক করেই যাচ্ছেন। জমির বিরক্তি আর আড়াল করতে না পেরে জিজ্ঞেস করে, ‘কী বলবেন স্যার, পার্টি মিটিংয়ে?’
জমির কখনোই কিছু জিজ্ঞেস করে না, এইবার জিজ্ঞেস করাতে নাজিম সাহেব খুব আনন্দ পেলেন। বদ্ধ গাড়িতে এসি চলছে, এর মধ্যেই তিনি সিগারেট ধরালেন। ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে তিনি বলতে লাগলেন—‘কী আর? এই যে ব্যাটা সুশীলেরা দেখে না এইগুলো। এই যে গরিবদের লাইনের দিকে তারা তাকায় না, দেখে না যে এদের কাপড়-চোপড়ের উন্নতি হয়েছে। কত ভালো ভালো কাপড় তারা পরা শুরু করেছে। আয় না বাড়লে কি আর তারা এসব কাপড় পরত? কত সুন্দর সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়ায়ে জিনিস কিনতেছে লোকে। সরকারের এই সব উন্নয়ন না দেখে তারা খালি এই নাই, ওই নাই করে। এসবই বলব আর কি।’
জমির চুপ করে থাকে। পেছন থেকে প্রচুর হর্নের শব্দ আসছে। ড্রাইভার উৎকণ্ঠা নিয়ে বলল, ‘স্যার, পেছনে মনে হয় গন্ডগোল।’ গন্ডগোলে নাজিম সাহেব আর ভয় পান না। তাঁর গাড়িতে পার্টির সিল লাগানো আছে। তিনি জমিরকে ব্যাপারটা দেখে আসতে বললেন, লাগলে পাশের থানার ওসিকে কল করতে বলে দেন।
জমির গাড়ি থেকে নেমে যায়। সে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যায়। টিসিবির লাইনটা বেশ লম্বা, কিলোমিটার খানেক হবে। লাইনের সবাইকে তার অনেক আপন লাগে। সবাই যেন তার চেনা, অতি পরিচিত। হঠাৎ একটা চেহারায় জমিরের চোখ আটকে যায়, চমকে ওঠে সে। লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন তার শিক্ষক নাজমুল স্যার; চেহারা ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টায় ব্যস্ত তিনি। সেই আগের মতোই সাদা শার্ট আর ছাই রঙের প্যান্ট পরনে। নাজমুল স্যারের সাদা শার্ট আর সাদা নেই, কেমন ধূসর হয়ে গেছে।
জমিরের মনে পড়ে যায় তাঁর মায়ের চিকিৎসার অভাবে মারা যাওয়ার কথা। পরপর কয়েক ঈদে তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের কাপড় কিনে দিতে না পারার কথা। মোটামুটি ভালো বেতন পেয়েও কোনোভাবেই সংসার চালিয়ে নিয়ে যেতে না পারার কথা। বেতন বাড়াতে বলায় তাঁর চাকরি চলে যাওয়ার কথা।
আচমকাই জমির ফুসে ওঠে। ভালো কাপড়-চোপড়, উন্নয়ন, সুশীল, নাজমুল স্যার, মায়ের ওষুধ, সন্তানের কান্না—সব তাঁকে চেপে ধরে। নাজমুল স্যারের পায়ের কাছে পড়ে থাকা একটা ইট নিয়ে সে নাজিম সাহেবের গাড়ির দিকে রওনা দেয়। পেছনে হট্টগোল বাড়তে থাকে, টিসিবির ট্রাকের পণ্য শেষ, বেশির ভাগ লোকই পায়নি কিছুই।
নাজমুল স্যার চেয়ে আছেন জমিরের দিকে। জমির নাজিম সাহেবের গাড়ির কাচ ভেঙে দিয়েছে ইট দিয়ে। লাইন থেকে তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে আরও অনেকজন। সামনের আর পেছনের মাইক্রো থেকে নাজিম সাহেবের সহযাত্রীরা সব পালিয়েছে। নাজিম সাহেব জমিরের চোখের দিকে চেয়ে আছেন। শিক্ষিত, ভদ্র, চুপচাপ জমিরের চোখে যেন আগুন লেগেছে।
নাজিম সাহেব ভয় পেয়েছেন। আজ বহু বছর পর তিনি ভয় পেয়েছেন।
নাজিম সাহেব আয়েশ করে কফিতে চুমুক দিচ্ছেন, পাশে বডিগার্ড জয়নাল তাঁর জন্য টাওয়েল আর পাইপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি কফিটা শেষ করেই পাইপ নেবেন, গুনে গুনে ৬টা টান দেবেন, তারপর টাওয়েল নিয়ে বাথরুমের দিকে যাবেন। প্রতি শনিবার তাঁর এই একই নিয়ম।
নাজিম সাহেবের কফি খাওয়া, বডিগার্ডের তাঁর জন্য অধীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা, পাইপ টানা—এ সবই তাঁর বাসার গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ডজন দুইয়েক লোক আগ্রহ নিয়ে দেখছে। এদের চোখের খিদা মেটানোই নাজিম সাহেবের ঝুল বারান্দায় বসার মূল কারণ; তা না হলে পাইপের চেয়ে বেনসনই তাঁর বেশি পছন্দ। অবশ্য পার্টির সেক্রেটারি বোর্ডের সদস্য হওয়ার পর থেকে তিনি মানুষের সামনে আর সিগারেট খান না, মাঝে মাঝে পাইপ টানেন। তাঁর ভালো লাগে, আরাম লাগে। এই আরাম যে পাইপ টানার আরাম নয়, সেটাও তিনি বোঝেন। বোঝেন বলেই আরামটা তাঁর আরও বেশি লাগে।
নাজিম সাহেব টাওয়েলটা নিয়ে বাথরুমে ঢুকলেন। তাঁর বাথরুম করতে সময় লাগে কিছুটা। তিনি বেনসন টেনে টেনে বড় কাজ সারেন, ততক্ষণে গিজারে পানি গরম হয়। তারপর শেভ করে, হট শাওয়ার নিয়ে তিনি বাথরুম থেকে বের হন। শনিবার দিন তিনি গোসল না করে বের হন না, তাঁর পীর সাহেবের মানা আছে।
মাথা মুছতে মুছতে নাজিম সাহেব জয়নালকে গাড়ি রেডি করার জন্য নিচে খবর দিতে বললেন। তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকায় যাবেন। গেটের সামনে যে ডজন দুইয়েক লোক, তাদের মধ্যে বেশির ভাগই তাঁর সঙ্গে যাবে, দু-একজন অবশ্য গাড়িতে জায়গা না হওয়ায় বাদ পড়বে; প্রতিবারই এমন হয়। গাড়ির সংখ্যা বাড়াতে বাড়াতে এখন চারটা হয়েছে, কিন্তু তা-ও প্রতিবারই কেউ না কেউ বাদ পড়েই। মুশকিল!
সামনে দুইটা আর পেছনে দুইটা মাইক্রো নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন নাজিম সাহেব। তিনি আগামীবার পার্টির নমিনেশন চাইবেন, তাই এলাকায় তাঁর প্রভাব পাকাপোক্ত করতেই ঘনঘন এলাকায় যাতায়াত করছেন। তাঁর নমিনেশন যদিও প্রায় নিশ্চিত, তা-ও তিনি রিস্ক নিতে চান না। ইতিমধ্যে অবশ্য তাঁর ক্ষমতার আঁচ লেগেছে অনেক জায়গায়ই। গতবার থানায় গিয়েই তিনি সেটা বুঝতে পেরেছেন। থানাওয়ালা যেভাবে তাঁকে খাতির-যত্ন করল, তিনি তো প্রায় বিব্রত অবস্থায়ই পড়েছিলেন। অবশ্য এলাকার লোকজনও এখন তাঁকে অন্য চোখে দেখে। চেয়ারম্যান-মেম্বার থেকে শুরু করে সবাই তাঁর আসার অপেক্ষায় বসে থাকে। নাজিম সাহেব ব্যাপারটা খুব উপভোগ করেন, তাঁর অনেক ভালো লাগে।
গাড়ির বহর ইস্কাটন পার হতেই মানুষের জটলা। আগের শনিবারগুলোয় এত জটলা থাকত না, কদিন ধরে জ্যাম লেগে যাচ্ছে। টিসিবির গাড়ির পেছনের জটলা দেখতে আগে তাঁর খারাপ লাগত, আজকাল তেমন খারাপ লাগে না। কদিন ধরে তিনি একটা অদ্ভুত ব্যাপার খেয়াল করছেন, টিসিবির লাইনের লোকগুলোর কাপড়-চোপড় বেশ ভালো। হয়তো এ কারণেই এদের দেখতে এত খারাপ লাগে না।
গাড়িতে ড্রাইভার ও নাজিম সাহেব ছাড়া আর একজন আছে, জমির। নাজিম সাহেবের দূর সম্পর্কের আত্মীয় জমির, তিনি তাকে পিএসের চাকরি দিয়েছেন। শিক্ষিত ভদ্র ছেলে সে, চুপচাপ। আগে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করত। কিছুদিন আগে তাঁর কাছে চাকরির জন্য এসেছিল। নাজিম সাহেব ইংরেজিতে একটু কাচা, ইদানীং আবার অনেক চিঠিপত্র আসে তাঁর কাছে, যেগুলো ইংরেজিতে লেখা। সাতপাঁচ না ভেবে তাই তিনি জমিরকে নিজ পিএসের চাকরিটা দিয়ে দিয়েছেন।
‘বুঝলে জমির?’—নাজিম সাহেবের ডাকে ড্রাইভারের পাশের সিট থেকে ঘাড় বাঁকা করে পেছনে তাকায় জমির। ‘দেশ যে এত উন্নত হচ্ছে, লোকে বুঝতে পারে না। কথায় কথায় খালি সরকাররে গালায়। সুশীল ব্যাটাদের তো খাইয়্যা কাম নাই, শালার ব্যাটারা খালি ভুল ধরে। বিদেশিদের টাকা খায় আর গালগপ্প বলে বেড়ায় ব্যাটারা।’ যদিও নাজিম সাহেব সারাক্ষণই এমন খিস্তি করতে থাকেন, তবু জমির অবাক হলো। শনিবার দিন সাধারণত তিনি আজেবাজে কথা বলেন না, তাঁর পীর সাহেবের মানা।
নাজিম সাহেব কোন প্রসঙ্গে বলছেন তার কিছুই না বুঝে জমির বলল ‘জি স্যার!’ নাজিম সাহেব সায় পেয়ে খুশি হলেন। তাঁর গালাগালির ঝুড়ি তিনি একেবারে খুলে দিলেন। সুশীলদের গুষ্টি উদ্ধার করে মিনিট দশেক বক্তব্য দিলেন, জমির শুধু জি স্যার, জি স্যার করতে লাগল। এতক্ষণে অবশ্য জমির প্রসঙ্গটা ধরতে পেরেছে। তাঁর এখন আর ‘জি স্যার, জি স্যার’ করতে ভালো লাগছে না। ‘দেখো না, দেখো কত মানুষ এখানে লাইন ধরে জিনিস কিনছে। বলো কখনো দেখেছ আগে এমন শৃঙ্খলাবদ্ধ লাইন? আর দেখো, এই সব লোকেরা কত ভালো ভালো কাপড় পরা। জুতাগুলো দেখো, ওই যে দেখছ, ওই মেয়েটা। দেখো কী সুন্দর কাপড় পরা। আর এই যে ক্রিকেট ব্যাট হাতে ছেলেটা। কী অদ্ভুত! আগামী পার্টি মিটিংয়ে বলতেই হবে ব্যাপারটা।’ নাজিম সাহেব বকবক করেই যাচ্ছেন। জমির বিরক্তি আর আড়াল করতে না পেরে জিজ্ঞেস করে, ‘কী বলবেন স্যার, পার্টি মিটিংয়ে?’
জমির কখনোই কিছু জিজ্ঞেস করে না, এইবার জিজ্ঞেস করাতে নাজিম সাহেব খুব আনন্দ পেলেন। বদ্ধ গাড়িতে এসি চলছে, এর মধ্যেই তিনি সিগারেট ধরালেন। ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে তিনি বলতে লাগলেন—‘কী আর? এই যে ব্যাটা সুশীলেরা দেখে না এইগুলো। এই যে গরিবদের লাইনের দিকে তারা তাকায় না, দেখে না যে এদের কাপড়-চোপড়ের উন্নতি হয়েছে। কত ভালো ভালো কাপড় তারা পরা শুরু করেছে। আয় না বাড়লে কি আর তারা এসব কাপড় পরত? কত সুন্দর সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়ায়ে জিনিস কিনতেছে লোকে। সরকারের এই সব উন্নয়ন না দেখে তারা খালি এই নাই, ওই নাই করে। এসবই বলব আর কি।’
জমির চুপ করে থাকে। পেছন থেকে প্রচুর হর্নের শব্দ আসছে। ড্রাইভার উৎকণ্ঠা নিয়ে বলল, ‘স্যার, পেছনে মনে হয় গন্ডগোল।’ গন্ডগোলে নাজিম সাহেব আর ভয় পান না। তাঁর গাড়িতে পার্টির সিল লাগানো আছে। তিনি জমিরকে ব্যাপারটা দেখে আসতে বললেন, লাগলে পাশের থানার ওসিকে কল করতে বলে দেন।
জমির গাড়ি থেকে নেমে যায়। সে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যায়। টিসিবির লাইনটা বেশ লম্বা, কিলোমিটার খানেক হবে। লাইনের সবাইকে তার অনেক আপন লাগে। সবাই যেন তার চেনা, অতি পরিচিত। হঠাৎ একটা চেহারায় জমিরের চোখ আটকে যায়, চমকে ওঠে সে। লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন তার শিক্ষক নাজমুল স্যার; চেহারা ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টায় ব্যস্ত তিনি। সেই আগের মতোই সাদা শার্ট আর ছাই রঙের প্যান্ট পরনে। নাজমুল স্যারের সাদা শার্ট আর সাদা নেই, কেমন ধূসর হয়ে গেছে।
জমিরের মনে পড়ে যায় তাঁর মায়ের চিকিৎসার অভাবে মারা যাওয়ার কথা। পরপর কয়েক ঈদে তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের কাপড় কিনে দিতে না পারার কথা। মোটামুটি ভালো বেতন পেয়েও কোনোভাবেই সংসার চালিয়ে নিয়ে যেতে না পারার কথা। বেতন বাড়াতে বলায় তাঁর চাকরি চলে যাওয়ার কথা।
আচমকাই জমির ফুসে ওঠে। ভালো কাপড়-চোপড়, উন্নয়ন, সুশীল, নাজমুল স্যার, মায়ের ওষুধ, সন্তানের কান্না—সব তাঁকে চেপে ধরে। নাজমুল স্যারের পায়ের কাছে পড়ে থাকা একটা ইট নিয়ে সে নাজিম সাহেবের গাড়ির দিকে রওনা দেয়। পেছনে হট্টগোল বাড়তে থাকে, টিসিবির ট্রাকের পণ্য শেষ, বেশির ভাগ লোকই পায়নি কিছুই।
নাজমুল স্যার চেয়ে আছেন জমিরের দিকে। জমির নাজিম সাহেবের গাড়ির কাচ ভেঙে দিয়েছে ইট দিয়ে। লাইন থেকে তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে আরও অনেকজন। সামনের আর পেছনের মাইক্রো থেকে নাজিম সাহেবের সহযাত্রীরা সব পালিয়েছে। নাজিম সাহেব জমিরের চোখের দিকে চেয়ে আছেন। শিক্ষিত, ভদ্র, চুপচাপ জমিরের চোখে যেন আগুন লেগেছে।
নাজিম সাহেব ভয় পেয়েছেন। আজ বহু বছর পর তিনি ভয় পেয়েছেন।
চারুশিল্প হচ্ছে মানুষের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। একটি ছবি একটি বিপ্লবের উন্মেষ ঘটাতে পারে। ছবি শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিপ্লবের বার্তাও নিয়ে আসে।
৭ দিন আগেআপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, এই বই পড়লে তারুণ্যশক্তিকে অনুভব করবেন, অনুপ্রাণিত হবেন। নতুন শুরুর একটা তাগিদ পাবেন। এই তরুণদের প্রত্যেকের মতো আপনিও বলে উঠবেন—সব সম্ভব! এই বইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম নেওয়া অবহেলিত অবস্থা থেকে সাফল্যের শীর্ষে যাওয়ার পথচলার গল্প উঠে এসেছে। প্রায় চার শ পৃষ্ঠার বইটির দাম
১৪ দিন আগেপ্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার দুই যুগের পথচলা (২০০০-২০২৪) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দশ দিনব্যাপী ‘ঐতিহ্য বই উৎসব ২০২৪’ আয়োজন করেছে। আজ ২ নভেম্বর শনিবার বেলা ১১টায় যৌথভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শারমিন আহমদ এবং তরুণ
১৪ দিন আগেদ্য ভেজিটেরিয়ানের পর হান কাঙের পরের উপন্যাস ছিল ‘দ্য উইন্ড ব্লোজ, গো’। এই উপন্যাস লেখার সময়ই ঘটে বিপত্তি! হান অনুভব করেন তিনি আর লিখতে পারছেন না। গত বছর নিজের পঞ্চম উপন্যাস ‘গ্রিক লেসন’ ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হলে স্পেনের এল-পাইস পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছিলেন তিনি।
১০ অক্টোবর ২০২৪