ইজাজুল হক
‘লফ্জ লফজ নোহা’-এর বাংলা তর্জমা দাঁড়ায় ‘শব্দে শব্দে বিলাপ’। ১৯৯৫ সালে নাজকির এ কাব্যগ্রন্থ সম্পর্কে আগের পর্বগুলোতে আমরা কিছু কথা জেনেছি। বিশেষ করে ফারুক নাজকির কবিতাশৈলী এবং গজল ও নজমের বৈশিষ্ট্য আলোচনায় ‘লফ্জ লফ্জ নোহা’-এর বেশ কিছু কবিতা উঠে এসেছে। কবিতাবিষয়ক সেসব ‘শুষ্কং কাষ্ঠং’ আলোচনা এড়িয়ে এবার আমরা বইয়ের পাতায় পাতায় শব্দমালার বিলাপ-ধ্বনি শুনতে চাই। অবশ্য ‘নার হেয়ুতুন কাজালভানাস’ পর্বেও আগুনের লেলিহান শিখা ও তাপ-উত্তাপের মোড়কে নাজকির বিলাপের ভিন্ন একটি রূপ আমরা প্রত্যক্ষ করেছি।
‘লফ্জ লফজ নোহা’-এর উৎসর্গপত্র থেকেই শুরু হয় ফারুকের বিলাপযাত্রা। জীবনের অন্যতম সেরা কাজটি তিনি সেই মানুষটির করকমলে অর্পণ করতে ভোলেননি, যাঁর জ্ঞান, প্রজ্ঞা, ব্যক্তিত্ব, কাব্যপ্রতিভা ও জীবন-অভিজ্ঞতা ফারুকের জীবনের মোড়ে-মোড়ে আলো ফেলেছে; তমসাচ্ছন্ন রাতে দুর্বার গতিতে জীবনের পিচঢালা সড়ক ধরে ছুটে যেতে দ্রুত গতির বাহনের কাজ করেছে। তিনি আর কেউ নন, নাজকির জীবন রোদ্দুরে আমৃত্যু ছায়া দিয়ে যাওয়া বটবৃক্ষ ও অনন্ত অনুপ্রেরণার বাতিঘর বাবা মির গোলাম রসুল নাজকি।
উৎসর্গপত্রের ভাষ্য এখানে থেমে যায়নি। ভেতরের বিলাপের সুরে পাঠকের মন ছুঁয়ে দিতে নাজকি আরেকজন ব্যক্তির হাতেও বইটি অর্পণ করেন। সোমনাথ সাধু নামের সেই ভাগ্যবান হয়তো বড় কেউ নন; তবুও তাঁর মায়ের প্রয়াণে নাজকি আকুল হন; বিলাপ করেন এবং তাঁর মাথায় বুলিয়ে দেন সান্ত্বনার পরশ। ফলে বিলাপের পাশাপাশি নাজকি এখানে কাশ্মীরের বহুরৈখিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হারানোর বেদনা কিছুটা লাঘব করার সুযোগ পান এবং সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের প্রতি তাঁর উষ্ণতার নজির স্থাপন করেন। ‘আরও একটি অর্পণ—সোমনাথ সাধু, তোমার নামে’ শিরোনামে তিনি লেখেন—
‘জানো, তোমার মা কামেলি
কাশ্মীর ছেড়ে গেছেন?
সঙ্গে নিয়ে গেছেন
সেই রুপোর থালাও—
যে থালায়
তিনি আমাদের একসঙ্গে খাওয়াতেন।
জানো কি, আমার ভয়েই তিনি
কাশ্মীর ছেড়ে পালিয়েছেন?’
সোমনাথ সাধুর প্রতি শোক জানানোর পাশাপাশি কাশ্মীরের সমাজবাস্তবতাও দারুণভাবে বাঙ্ময় হয়ে ওঠে নাজকির এই কয়েক ছত্রে। নাজকির কলম কাশ্মীরের প্রতি শাসকদের বিমাতাসুলভ আচরণের সঙ্গে কখনো আপস করেনি, বিচ্ছিন্নতাবাদ উসকে দেওয়া ‘দ্রোহের আগুন’-এও ঘি ঢালেননি তিনি। বরং সব ধরনের নৈরাজ্য, অস্থিতিশীলতা ও অশান্তির জন্য হৃদয়ের গহিনে গুঞ্জরিত বিলাপের প্রকাশ ঘটিয়েছেন কবিতার শব্দে-শব্দে।
‘শহরজুড়েই কারবালা প্রান্তর
রক্তখেকোর দল ছিল সর্বত্রই
ত্রাসের কাঁটাতারে ঘেরা কল্পনা-দেবালয়
উত্তরে আছি, না দক্ষিণে—জানা নেই।
রাতের হিংস্রতা সইতে পারব না আমি—
ক্রমেই ভেঙে পড়ছি, হে অপেক্ষাসন্ধ্যা।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস কেউ-ই দেবে না
কিংবা সতর্ক সাইরেন, হে শূন্য তেপান্তর
চোখের পলকেই আগুন জ্বলে লোকালয়ে
প্রত্যহ লুণ্ঠিত হয় হাসিমুখ নতুন সংসার
গাছে-গাছে জেঁকে বসে মৃত্যুর নীরবতা;
এ কেমন অস্ত্রবাজির মৌসুম এল—
বিষণ্ন উদ্যানের ফুল যায় শুকিয়ে
শরতের আঘাতে বিধ্বস্ত গুলশান।’
এমন মৃত্যুপুরীর মধ্যে কবির জীবন দুঃখ-বিষণ্নতার কালো মেঘে ঢেকে যায়। চারদিকে অন্ধকার ছেয়ে যায়। সন্ধ্যার আগেই পৃথিবীতে নেমে আসে আঁধারের প্রেতাত্মারা। কাশ্মীরের প্রকৃতি ও আবহাওয়ায় ঘুমোনোর সব উপাদান থাকা সত্ত্বেও তিনি ঘুমোতে পারেন না। নিঃসঙ্গ নক্ষত্র হয়ে চাঁদের কোলে জেগে থাকেন রাতের পর রাত। পৃথিবীর সকল ঘরে ঘুমপরী এলেও নাজকির কাশ্মীরে সে আসে না। তাই তাঁর আকুল জিজ্ঞাসা—‘ঘুম কেন আসে না?’
‘নীরবতা সাঙ্গ করে
বৃক্ষে ঝোলে রাত—
মাঠ-ঘাট জনশূন্য;
উঁচু-নিচু টিলায়
বিষাদ ঝরায়
আলোর কোলাহল—
ঘুম কেন আসে না?
দিনের উষ্ণ মেলায়
আমি বিষণ্ন থাকি
সন্ধ্যার কোলাহলে
আমি হতাশ থাকি
সচেতন থাকি আমি
মাদক নিয়েও
হৃদয়ে বিদ্ধ তিরের
আঘাত সয়ে যাই,
ভাবি—পৃথিবীতে
আমিও কত একা!
চাঁদের বাহুডোরে
জোছনার আলো
মুড়িয়ে শুয়ে আছি—
ঘুম কেন আসে না?
ঘুম খুশবু—
রাতের বাতাসে
এখানে-সেখানে ঘোরে;
আমার ঘরে আসে না
দূরত্ব বজায় রেখে চলে;
আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করি—
ঘুম কেন আসে না?’
দুই.
‘লফ্জ লফ্জ নোহা’ একদিকে যেমন সময়ের বিড়ম্বনার ক্যানভাস, অন্যদিকে কাশ্মীরের ঋতুবৈচিত্র্য, প্রকৃতি ও পরিবেশের অনন্য আলপনাও বটে। তবে তাতেও নাজকির বিলাপের সুর মিশে যায় দূরের কোনো পর্বতে কিংবা জলপ্রপাতের ছলাৎ-ছলাৎ শব্দে।
‘লাস্যময়ী শাহজাদি—মৌসুম
আমার রূপকরাজ্যে লুকায়
প্রথম বর্ষণ থেকে তুষারকাল—
একাই সয়ে গেছি সবকিছু;
জিজ্ঞেস করি—তোমার রুটি-রুজি?
ঝিলম বলে—ভেসে গেছে সব।
শীতে তুষারঝড় হবে
এবং ডেকে আনবে বিপদ;
আমার অস্তিত্বজুড়েই বৈপরিত্যের চাষ
বসন্তের শোক-গীত গাইব আমি।
মৌসুমের ছকে বাধা নেই শিলাবৃষ্টিও—
নিত্য আমাদের মাথা খুঁজে নেয় তা;
বিতস্তায় ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে
মানুষ—খড়কুটোর মতো করে।’
কাশ্মীরে মৌসুমের সেই জৌলুশ আর নেই। খড়কুটোর মতো করে মানুষকে যেখানে বিতস্তা তথা ঝিলমের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে কোনো কিছুই আর ঠিকমতো চলতে পারে না। ঠিকমতো বৃষ্টি নামে না। তুষারঝড় ও শিলাবৃষ্টির পিঠে ভর করে ধেয়ে আসে দানবেরা। নাজকির দিনকাল ভালো যায় না। হতাশা জেঁকে বসে তাঁর ভেতর। গুলরিজ শহরের পুরোনো প্রিয়তমার সান্নিধ্য পেতে তাঁর হৃদয় হাহাকার করে ওঠে।
‘এখানে, শূন্য মরুতে প্রলম্বিত হচ্ছে ছায়া
গুলরিজ থেকে কেউ আমাকে আবার ডাকুক;
বিষাদকালে তোমার স্বপ্নযোগে আসাও
অসুস্থকে অমৃত খাইয়ে দেওয়ার মতো;
স্থির না হও, সম্মতি না দাও আমাকে—
অবিশ্বাস থেকে তো অন্তত মুক্তি দেবে!’
নাজকির তীব্র আকাঙ্ক্ষার কাছে হার মেনে সে স্বপ্নে হলেও আসে; আসতেই থাকে। এ এক নতুন যন্ত্রণা—তাকে ভুলে থাকার জন্য কবি শহর থেকে দূরে অজানা গন্তব্যে চলে যান। সেখানেও কবির নিস্তার নেই। চোখ বুঁজতেই সে তাঁর তনু-মনে শিহরণ জাগায়।
‘শ্রাবণ-শ্রাবণ জল-ফেলা চোখ
তোমার নামে সদকা দিলাম
মরুর সমান আকাঙ্ক্ষা-পা
মাতাল হস্ত আঁচল সমান
শহর ছেড়ে এলাম বনে
ভেবেছিলাম—থাকব একা
চোখ বুজতেই তুমি এসে
করলে সবই ওলটপালট।’
নাজকির চোখ প্রিয়তমার রূপ-ঐশ্বর্য্যের অনুপুঙ্খ হিসেব রাখে। প্রিয়তমার সকল সৌন্দর্য খুঁজে ফেরেন তিনি কাশ্মীরের পাহাড়, ঝিরি, নদী ও উপত্যকার পরতে-পরতে। নিবিড় প্রেমের উষ্ণতায় প্রকৃতি তাঁর সামনে সকল সৌন্দর্য উন্মুক্ত করে। কবি বিস্মিত হন, তৃপ্ত হন এবং আধ্যাত্মিক হন। এমন অপার সৌন্দর্যের প্রতিটি উপাদানে স্রষ্টার খোঁজ করেন।
‘মাঠ থেকে মাঠে আলো ছড়ায় সত্যের মুক্তোরা
বাগানে-বাগানে তোমার নিদর্শন নিয়ে আসে কে
আঙিনার এই সব ঝরাপাতাদের
জিজ্ঞেস করো সৃষ্টিকর্তার কথা।’
তিন.
ফিরে যাই বিলাপ প্রসঙ্গে। নাজকি একটানা বিলাপ করেই যান না, মাঝেমধ্যে শ্লেষ মিশিয়ে ছুড়ে দেন কথার তিরও। কাশ্মীরিদের সবকিছু কেড়ে নিলেও খুব সীমিত পরিসরে কথা বলার জায়গা তো রাখা হয়েছে, সে জন্য কর্তৃপক্ষকে বিশেষ ধন্যবাদ দিয়ে অধিকার হরণের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। অবশ্য এ পর্যায়েও সত্য উচ্চারণে তিনি দ্বিধাহীন।
‘পরিস্থিতি এত বেশি খারাপ নয়—
বলতে পারব না এমন কথাও নেই;
তোমার পথে বিছিয়েছিলাম আমরা চোখের পাতা
আর তুমি, তুমি আমাদের পথে কাঁটা বিছিয়ে দিলে!’
মূলত পরিস্থিতি এতই ভয়াবহ যে, নিজের ছায়াকেও সন্দেহ করতে শুরু করেন নাজকি। কথা বলার স্বাধীনতা বলতে কিছুই নেই সেখানে। অফিস, বাসা, স্ত্রী, সন্তানদের সঙ্গে কথা বলতেও তাঁর যত ভয়। কাশ্মীরের অবারিত প্রকৃতির বুকে এমন গুমোট সন্ধ্যা কখনো নামেনি। নাজকি বলেন—
‘স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সময়
মেপে-মেপে শব্দ চয়ন করি
অফিসে সহকর্মীদের সামনে
লিখিত বক্তব্য পাঠ করি।
কলিজার টুকরো মেয়েটির
চোখোচোখি হতে কাঁপন ধরে যায়—
এ কেমন বসন্ত এল, খোদা
সকাল থেকে খুশবুরাও আতঙ্কিত;
এ কেমন মাতাল মৌসুম এল
ফুলবানুদের সঙ্গে মিলিয়ে গেল ভোরে হাওয়াও।’
নাজকির বিলাপ থামে না। ‘লফ্জ লফ্জ নোহা’-এর শব্দে শব্দে, লাইনে-লাইনে, পদে-পদে এক নিঃস্ব-পরাধীন আহত মানবাত্মার করুণ কান্না শোনা যায়। দেশের মাটি-মানুষ ও ঐতিহ্য-সংস্কৃতির সুরক্ষার জন্য এই বিলাপ অত্যন্ত দরকারি; নাজকির কণ্ঠ থেকে তা নিঃসন্দেহে পৃথিবীর সকল জনপদে ছড়িয়ে পড়বে।
কবি ফারুক নাজকির গল্প বলা এখানেই শেষ করতে চাই। কোনো এক বিদেশি কবি বলেছিলেন, ‘একটি কবিতার সেইটুকুই বিশুদ্ধ কবিতা, যার অনুবাদ সম্ভব নয়।’ সুতরাং আমার দুর্বলতম অনুবাদে নিশ্চয়ই নাজকিকে বিচার করবেন না পাঠক। ভিনদেশের একজন কবির জীবনপাঠের মাধ্যমে সে দেশের সংস্কৃতির ভেতরে প্রবেশ করাই আমাদের লক্ষ্য। নাজকির কবিতার অনুবাদক হিসেবে এটুকই আমার কৈফিয়ত। চলুন, নাজকির রোমান্টিক কবিতা ‘মধ্যরাতের বিলাপ’ শুনতে-শুনতে ঘুমিয়ে পড়া যাক—
‘আমি ও তুমি যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ি
নিশ্বাস ভারী হয়ে আসে
প্রথমে শিথিল পরে শীতল হয়ে পড়ে জরায়ু
এবং স্বরূপে ফিরে আসে আমাদের মুখচ্ছবি
তখন এলোমেলো ভাবি
বিচ্ছেদ হলে আমাদের কী হবে
তোমার কী হবে আমাকে ছাড়া
আমার কী হবে তোমাকে ছাড়া
আমি বেঁচে থাকতে তুমি মরে যাবে
আমি তো ভাবতেই পারি না
এবং এও ভাবতে পারি না—
যদি আমি তোমার আগে মরে যাই
তুমি কীভাবে কাঁদবে
আমরা কত অসহায় ও একা
আমাদের প্রাণ দুটো একদেহে মিশিয়ে নেওয়া কি সম্ভব নয়
আমি-তুমির দ্বন্দ্বই যেন মিটে যায়?
আমরা একই শাখার দুটি ফুল
আমাদের রুচি ও রসনা এক
আমাদের দেহের রসায়ন এক
সত্যিকারের হৃদয়ও এক আমাদের—
তো আমাদের বিচ্ছেদ কেন হবে
কোনো পথ কি নেই
কোনো উপায় কি নেই—
এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করো
যাতে আমরা দুই হৃদয়কে স্পন্দিত
এবং দিনগুলোকে আলোঝরা রাখতে পারি
এবং এর পর
আমি শহর-নগরে ঘুরে বেড়াব
অলিগলি-বাজারে দৌড়াব
এবং সতত তোমার কণ্ঠ ওপরের আকাশ থেকে
নামতে থাকবে এবং পৃথিবী সজীব করতে থাকবে
এবং আমি ভালোবাসা-সাগরে সুরের নৃত্য দেখব
দেহ কতই না দুর্বল
এবং আমরা এ অবয়বে এ জন্যই সৃজিত হয়েছি
যে নিঃশেষিত হওয়ার স্বাদের মজনু হই
মৃত্যু নিয়ে আমি একটু বেশিই ভাবি
তোমার নিশ্বাস আমার কাঁধ স্পর্শ না করলে
আমি কেঁপে-কেঁপে উঠি
মৃত্যুর নীরবতাকে আমি ভয় পাই
কিন্তু সেই মুহূর্ত তো আসবেই—
শুভ্র লিলি ও হলদে সূর্যমুখীর চাদর পরে
আমাদের একজন যখন প্রথম মাটির নিচে চলে যাবে
তখন সব দিক থেকে ভেসে আসবে কান্নার শব্দ
এর পর নীরবতা…
নৈঃশব্দ…
এবং কবরের নীরবতা ভালোই লাগবে
তবে কবরের বাইরে যে মানুষটি এ নীরবতা সয়ে যাওয়ার দণ্ড পাবে
তার অবস্থা কত ভয়ানক হবে
এখন তুমিই বলো—কী করব
কত কঠিন পরিস্থিতি দেখো—
তোমার কোমল দেহের স্পর্শে এবং
তোমার কণ্ঠস্বরের ঝনঝনানিতেই
তোমার ভালোবাসা টের পাই আমি;
জৈবিকতা থেকে দূরে
অনুভব-সীমান্তের ওপারে
তুমি পর্যন্ত পৌঁছাতে আমি অক্ষম
এবং দেহের এ বাঁধন যেদিন ছিন্ন হবে
সেদিন এখানে, যেখানে আজ আমরা ভাবের রাজ্যে হারিয়ে যাচ্ছি
সেখানে পড়ে থাকবে একটি শূন্য পিঞ্জর।’
আরও পড়ুন:
‘লফ্জ লফজ নোহা’-এর বাংলা তর্জমা দাঁড়ায় ‘শব্দে শব্দে বিলাপ’। ১৯৯৫ সালে নাজকির এ কাব্যগ্রন্থ সম্পর্কে আগের পর্বগুলোতে আমরা কিছু কথা জেনেছি। বিশেষ করে ফারুক নাজকির কবিতাশৈলী এবং গজল ও নজমের বৈশিষ্ট্য আলোচনায় ‘লফ্জ লফ্জ নোহা’-এর বেশ কিছু কবিতা উঠে এসেছে। কবিতাবিষয়ক সেসব ‘শুষ্কং কাষ্ঠং’ আলোচনা এড়িয়ে এবার আমরা বইয়ের পাতায় পাতায় শব্দমালার বিলাপ-ধ্বনি শুনতে চাই। অবশ্য ‘নার হেয়ুতুন কাজালভানাস’ পর্বেও আগুনের লেলিহান শিখা ও তাপ-উত্তাপের মোড়কে নাজকির বিলাপের ভিন্ন একটি রূপ আমরা প্রত্যক্ষ করেছি।
‘লফ্জ লফজ নোহা’-এর উৎসর্গপত্র থেকেই শুরু হয় ফারুকের বিলাপযাত্রা। জীবনের অন্যতম সেরা কাজটি তিনি সেই মানুষটির করকমলে অর্পণ করতে ভোলেননি, যাঁর জ্ঞান, প্রজ্ঞা, ব্যক্তিত্ব, কাব্যপ্রতিভা ও জীবন-অভিজ্ঞতা ফারুকের জীবনের মোড়ে-মোড়ে আলো ফেলেছে; তমসাচ্ছন্ন রাতে দুর্বার গতিতে জীবনের পিচঢালা সড়ক ধরে ছুটে যেতে দ্রুত গতির বাহনের কাজ করেছে। তিনি আর কেউ নন, নাজকির জীবন রোদ্দুরে আমৃত্যু ছায়া দিয়ে যাওয়া বটবৃক্ষ ও অনন্ত অনুপ্রেরণার বাতিঘর বাবা মির গোলাম রসুল নাজকি।
উৎসর্গপত্রের ভাষ্য এখানে থেমে যায়নি। ভেতরের বিলাপের সুরে পাঠকের মন ছুঁয়ে দিতে নাজকি আরেকজন ব্যক্তির হাতেও বইটি অর্পণ করেন। সোমনাথ সাধু নামের সেই ভাগ্যবান হয়তো বড় কেউ নন; তবুও তাঁর মায়ের প্রয়াণে নাজকি আকুল হন; বিলাপ করেন এবং তাঁর মাথায় বুলিয়ে দেন সান্ত্বনার পরশ। ফলে বিলাপের পাশাপাশি নাজকি এখানে কাশ্মীরের বহুরৈখিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হারানোর বেদনা কিছুটা লাঘব করার সুযোগ পান এবং সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের প্রতি তাঁর উষ্ণতার নজির স্থাপন করেন। ‘আরও একটি অর্পণ—সোমনাথ সাধু, তোমার নামে’ শিরোনামে তিনি লেখেন—
‘জানো, তোমার মা কামেলি
কাশ্মীর ছেড়ে গেছেন?
সঙ্গে নিয়ে গেছেন
সেই রুপোর থালাও—
যে থালায়
তিনি আমাদের একসঙ্গে খাওয়াতেন।
জানো কি, আমার ভয়েই তিনি
কাশ্মীর ছেড়ে পালিয়েছেন?’
সোমনাথ সাধুর প্রতি শোক জানানোর পাশাপাশি কাশ্মীরের সমাজবাস্তবতাও দারুণভাবে বাঙ্ময় হয়ে ওঠে নাজকির এই কয়েক ছত্রে। নাজকির কলম কাশ্মীরের প্রতি শাসকদের বিমাতাসুলভ আচরণের সঙ্গে কখনো আপস করেনি, বিচ্ছিন্নতাবাদ উসকে দেওয়া ‘দ্রোহের আগুন’-এও ঘি ঢালেননি তিনি। বরং সব ধরনের নৈরাজ্য, অস্থিতিশীলতা ও অশান্তির জন্য হৃদয়ের গহিনে গুঞ্জরিত বিলাপের প্রকাশ ঘটিয়েছেন কবিতার শব্দে-শব্দে।
‘শহরজুড়েই কারবালা প্রান্তর
রক্তখেকোর দল ছিল সর্বত্রই
ত্রাসের কাঁটাতারে ঘেরা কল্পনা-দেবালয়
উত্তরে আছি, না দক্ষিণে—জানা নেই।
রাতের হিংস্রতা সইতে পারব না আমি—
ক্রমেই ভেঙে পড়ছি, হে অপেক্ষাসন্ধ্যা।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস কেউ-ই দেবে না
কিংবা সতর্ক সাইরেন, হে শূন্য তেপান্তর
চোখের পলকেই আগুন জ্বলে লোকালয়ে
প্রত্যহ লুণ্ঠিত হয় হাসিমুখ নতুন সংসার
গাছে-গাছে জেঁকে বসে মৃত্যুর নীরবতা;
এ কেমন অস্ত্রবাজির মৌসুম এল—
বিষণ্ন উদ্যানের ফুল যায় শুকিয়ে
শরতের আঘাতে বিধ্বস্ত গুলশান।’
এমন মৃত্যুপুরীর মধ্যে কবির জীবন দুঃখ-বিষণ্নতার কালো মেঘে ঢেকে যায়। চারদিকে অন্ধকার ছেয়ে যায়। সন্ধ্যার আগেই পৃথিবীতে নেমে আসে আঁধারের প্রেতাত্মারা। কাশ্মীরের প্রকৃতি ও আবহাওয়ায় ঘুমোনোর সব উপাদান থাকা সত্ত্বেও তিনি ঘুমোতে পারেন না। নিঃসঙ্গ নক্ষত্র হয়ে চাঁদের কোলে জেগে থাকেন রাতের পর রাত। পৃথিবীর সকল ঘরে ঘুমপরী এলেও নাজকির কাশ্মীরে সে আসে না। তাই তাঁর আকুল জিজ্ঞাসা—‘ঘুম কেন আসে না?’
‘নীরবতা সাঙ্গ করে
বৃক্ষে ঝোলে রাত—
মাঠ-ঘাট জনশূন্য;
উঁচু-নিচু টিলায়
বিষাদ ঝরায়
আলোর কোলাহল—
ঘুম কেন আসে না?
দিনের উষ্ণ মেলায়
আমি বিষণ্ন থাকি
সন্ধ্যার কোলাহলে
আমি হতাশ থাকি
সচেতন থাকি আমি
মাদক নিয়েও
হৃদয়ে বিদ্ধ তিরের
আঘাত সয়ে যাই,
ভাবি—পৃথিবীতে
আমিও কত একা!
চাঁদের বাহুডোরে
জোছনার আলো
মুড়িয়ে শুয়ে আছি—
ঘুম কেন আসে না?
ঘুম খুশবু—
রাতের বাতাসে
এখানে-সেখানে ঘোরে;
আমার ঘরে আসে না
দূরত্ব বজায় রেখে চলে;
আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করি—
ঘুম কেন আসে না?’
দুই.
‘লফ্জ লফ্জ নোহা’ একদিকে যেমন সময়ের বিড়ম্বনার ক্যানভাস, অন্যদিকে কাশ্মীরের ঋতুবৈচিত্র্য, প্রকৃতি ও পরিবেশের অনন্য আলপনাও বটে। তবে তাতেও নাজকির বিলাপের সুর মিশে যায় দূরের কোনো পর্বতে কিংবা জলপ্রপাতের ছলাৎ-ছলাৎ শব্দে।
‘লাস্যময়ী শাহজাদি—মৌসুম
আমার রূপকরাজ্যে লুকায়
প্রথম বর্ষণ থেকে তুষারকাল—
একাই সয়ে গেছি সবকিছু;
জিজ্ঞেস করি—তোমার রুটি-রুজি?
ঝিলম বলে—ভেসে গেছে সব।
শীতে তুষারঝড় হবে
এবং ডেকে আনবে বিপদ;
আমার অস্তিত্বজুড়েই বৈপরিত্যের চাষ
বসন্তের শোক-গীত গাইব আমি।
মৌসুমের ছকে বাধা নেই শিলাবৃষ্টিও—
নিত্য আমাদের মাথা খুঁজে নেয় তা;
বিতস্তায় ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে
মানুষ—খড়কুটোর মতো করে।’
কাশ্মীরে মৌসুমের সেই জৌলুশ আর নেই। খড়কুটোর মতো করে মানুষকে যেখানে বিতস্তা তথা ঝিলমের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে কোনো কিছুই আর ঠিকমতো চলতে পারে না। ঠিকমতো বৃষ্টি নামে না। তুষারঝড় ও শিলাবৃষ্টির পিঠে ভর করে ধেয়ে আসে দানবেরা। নাজকির দিনকাল ভালো যায় না। হতাশা জেঁকে বসে তাঁর ভেতর। গুলরিজ শহরের পুরোনো প্রিয়তমার সান্নিধ্য পেতে তাঁর হৃদয় হাহাকার করে ওঠে।
‘এখানে, শূন্য মরুতে প্রলম্বিত হচ্ছে ছায়া
গুলরিজ থেকে কেউ আমাকে আবার ডাকুক;
বিষাদকালে তোমার স্বপ্নযোগে আসাও
অসুস্থকে অমৃত খাইয়ে দেওয়ার মতো;
স্থির না হও, সম্মতি না দাও আমাকে—
অবিশ্বাস থেকে তো অন্তত মুক্তি দেবে!’
নাজকির তীব্র আকাঙ্ক্ষার কাছে হার মেনে সে স্বপ্নে হলেও আসে; আসতেই থাকে। এ এক নতুন যন্ত্রণা—তাকে ভুলে থাকার জন্য কবি শহর থেকে দূরে অজানা গন্তব্যে চলে যান। সেখানেও কবির নিস্তার নেই। চোখ বুঁজতেই সে তাঁর তনু-মনে শিহরণ জাগায়।
‘শ্রাবণ-শ্রাবণ জল-ফেলা চোখ
তোমার নামে সদকা দিলাম
মরুর সমান আকাঙ্ক্ষা-পা
মাতাল হস্ত আঁচল সমান
শহর ছেড়ে এলাম বনে
ভেবেছিলাম—থাকব একা
চোখ বুজতেই তুমি এসে
করলে সবই ওলটপালট।’
নাজকির চোখ প্রিয়তমার রূপ-ঐশ্বর্য্যের অনুপুঙ্খ হিসেব রাখে। প্রিয়তমার সকল সৌন্দর্য খুঁজে ফেরেন তিনি কাশ্মীরের পাহাড়, ঝিরি, নদী ও উপত্যকার পরতে-পরতে। নিবিড় প্রেমের উষ্ণতায় প্রকৃতি তাঁর সামনে সকল সৌন্দর্য উন্মুক্ত করে। কবি বিস্মিত হন, তৃপ্ত হন এবং আধ্যাত্মিক হন। এমন অপার সৌন্দর্যের প্রতিটি উপাদানে স্রষ্টার খোঁজ করেন।
‘মাঠ থেকে মাঠে আলো ছড়ায় সত্যের মুক্তোরা
বাগানে-বাগানে তোমার নিদর্শন নিয়ে আসে কে
আঙিনার এই সব ঝরাপাতাদের
জিজ্ঞেস করো সৃষ্টিকর্তার কথা।’
তিন.
ফিরে যাই বিলাপ প্রসঙ্গে। নাজকি একটানা বিলাপ করেই যান না, মাঝেমধ্যে শ্লেষ মিশিয়ে ছুড়ে দেন কথার তিরও। কাশ্মীরিদের সবকিছু কেড়ে নিলেও খুব সীমিত পরিসরে কথা বলার জায়গা তো রাখা হয়েছে, সে জন্য কর্তৃপক্ষকে বিশেষ ধন্যবাদ দিয়ে অধিকার হরণের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। অবশ্য এ পর্যায়েও সত্য উচ্চারণে তিনি দ্বিধাহীন।
‘পরিস্থিতি এত বেশি খারাপ নয়—
বলতে পারব না এমন কথাও নেই;
তোমার পথে বিছিয়েছিলাম আমরা চোখের পাতা
আর তুমি, তুমি আমাদের পথে কাঁটা বিছিয়ে দিলে!’
মূলত পরিস্থিতি এতই ভয়াবহ যে, নিজের ছায়াকেও সন্দেহ করতে শুরু করেন নাজকি। কথা বলার স্বাধীনতা বলতে কিছুই নেই সেখানে। অফিস, বাসা, স্ত্রী, সন্তানদের সঙ্গে কথা বলতেও তাঁর যত ভয়। কাশ্মীরের অবারিত প্রকৃতির বুকে এমন গুমোট সন্ধ্যা কখনো নামেনি। নাজকি বলেন—
‘স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সময়
মেপে-মেপে শব্দ চয়ন করি
অফিসে সহকর্মীদের সামনে
লিখিত বক্তব্য পাঠ করি।
কলিজার টুকরো মেয়েটির
চোখোচোখি হতে কাঁপন ধরে যায়—
এ কেমন বসন্ত এল, খোদা
সকাল থেকে খুশবুরাও আতঙ্কিত;
এ কেমন মাতাল মৌসুম এল
ফুলবানুদের সঙ্গে মিলিয়ে গেল ভোরে হাওয়াও।’
নাজকির বিলাপ থামে না। ‘লফ্জ লফ্জ নোহা’-এর শব্দে শব্দে, লাইনে-লাইনে, পদে-পদে এক নিঃস্ব-পরাধীন আহত মানবাত্মার করুণ কান্না শোনা যায়। দেশের মাটি-মানুষ ও ঐতিহ্য-সংস্কৃতির সুরক্ষার জন্য এই বিলাপ অত্যন্ত দরকারি; নাজকির কণ্ঠ থেকে তা নিঃসন্দেহে পৃথিবীর সকল জনপদে ছড়িয়ে পড়বে।
কবি ফারুক নাজকির গল্প বলা এখানেই শেষ করতে চাই। কোনো এক বিদেশি কবি বলেছিলেন, ‘একটি কবিতার সেইটুকুই বিশুদ্ধ কবিতা, যার অনুবাদ সম্ভব নয়।’ সুতরাং আমার দুর্বলতম অনুবাদে নিশ্চয়ই নাজকিকে বিচার করবেন না পাঠক। ভিনদেশের একজন কবির জীবনপাঠের মাধ্যমে সে দেশের সংস্কৃতির ভেতরে প্রবেশ করাই আমাদের লক্ষ্য। নাজকির কবিতার অনুবাদক হিসেবে এটুকই আমার কৈফিয়ত। চলুন, নাজকির রোমান্টিক কবিতা ‘মধ্যরাতের বিলাপ’ শুনতে-শুনতে ঘুমিয়ে পড়া যাক—
‘আমি ও তুমি যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ি
নিশ্বাস ভারী হয়ে আসে
প্রথমে শিথিল পরে শীতল হয়ে পড়ে জরায়ু
এবং স্বরূপে ফিরে আসে আমাদের মুখচ্ছবি
তখন এলোমেলো ভাবি
বিচ্ছেদ হলে আমাদের কী হবে
তোমার কী হবে আমাকে ছাড়া
আমার কী হবে তোমাকে ছাড়া
আমি বেঁচে থাকতে তুমি মরে যাবে
আমি তো ভাবতেই পারি না
এবং এও ভাবতে পারি না—
যদি আমি তোমার আগে মরে যাই
তুমি কীভাবে কাঁদবে
আমরা কত অসহায় ও একা
আমাদের প্রাণ দুটো একদেহে মিশিয়ে নেওয়া কি সম্ভব নয়
আমি-তুমির দ্বন্দ্বই যেন মিটে যায়?
আমরা একই শাখার দুটি ফুল
আমাদের রুচি ও রসনা এক
আমাদের দেহের রসায়ন এক
সত্যিকারের হৃদয়ও এক আমাদের—
তো আমাদের বিচ্ছেদ কেন হবে
কোনো পথ কি নেই
কোনো উপায় কি নেই—
এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করো
যাতে আমরা দুই হৃদয়কে স্পন্দিত
এবং দিনগুলোকে আলোঝরা রাখতে পারি
এবং এর পর
আমি শহর-নগরে ঘুরে বেড়াব
অলিগলি-বাজারে দৌড়াব
এবং সতত তোমার কণ্ঠ ওপরের আকাশ থেকে
নামতে থাকবে এবং পৃথিবী সজীব করতে থাকবে
এবং আমি ভালোবাসা-সাগরে সুরের নৃত্য দেখব
দেহ কতই না দুর্বল
এবং আমরা এ অবয়বে এ জন্যই সৃজিত হয়েছি
যে নিঃশেষিত হওয়ার স্বাদের মজনু হই
মৃত্যু নিয়ে আমি একটু বেশিই ভাবি
তোমার নিশ্বাস আমার কাঁধ স্পর্শ না করলে
আমি কেঁপে-কেঁপে উঠি
মৃত্যুর নীরবতাকে আমি ভয় পাই
কিন্তু সেই মুহূর্ত তো আসবেই—
শুভ্র লিলি ও হলদে সূর্যমুখীর চাদর পরে
আমাদের একজন যখন প্রথম মাটির নিচে চলে যাবে
তখন সব দিক থেকে ভেসে আসবে কান্নার শব্দ
এর পর নীরবতা…
নৈঃশব্দ…
এবং কবরের নীরবতা ভালোই লাগবে
তবে কবরের বাইরে যে মানুষটি এ নীরবতা সয়ে যাওয়ার দণ্ড পাবে
তার অবস্থা কত ভয়ানক হবে
এখন তুমিই বলো—কী করব
কত কঠিন পরিস্থিতি দেখো—
তোমার কোমল দেহের স্পর্শে এবং
তোমার কণ্ঠস্বরের ঝনঝনানিতেই
তোমার ভালোবাসা টের পাই আমি;
জৈবিকতা থেকে দূরে
অনুভব-সীমান্তের ওপারে
তুমি পর্যন্ত পৌঁছাতে আমি অক্ষম
এবং দেহের এ বাঁধন যেদিন ছিন্ন হবে
সেদিন এখানে, যেখানে আজ আমরা ভাবের রাজ্যে হারিয়ে যাচ্ছি
সেখানে পড়ে থাকবে একটি শূন্য পিঞ্জর।’
আরও পড়ুন:
আধুনিক আফ্রিকান সাহিত্যের পুরোধা ব্যক্তিত্ব চিনুয়া আচেবের জন্ম ১৯৩০ সালের ১৬ নভেম্বর নাইজেরিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল ওগিদিতে। তিনি ইবাদান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম স্নাতকদের একজন। লেখাপড়া শেষে নাইজেরিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনে রেডিও প্রযোজক ও এক্সটারনাল ব্রডকাস্টিংয়ের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
২০ ঘণ্টা আগেবারী সিদ্দিকী সংগীতজীবনের প্রথম দিকে বংশীবাদক হিসেবে পরিচিত পেলেও পরবর্তী সময়ে তিনি একজন লোকসংগীতশিল্পী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।
২ দিন আগেতিনি ছিলেন একজন আদর্শবান শিক্ষক—অজিতকুমার গুহর এটাই সবচেয়ে বড় পরিচয়। নিজের জাগতিক উন্নতিকে কখনো বড় করে দেখেননি তিনি। শিক্ষার্থীদের আদর্শ জীবন উপহার দেওয়াই ছিল তাঁর ব্রত। তিনি সক্রিয় ছিলেন ঢাকার প্রগতিশীল সাহিত্য-সাংস্কৃতিক পরিসরেও। সুবক্তা হিসেবে তাঁর খ্যাতির কমতি ছিল না।
৫ দিন আগেআব্দুল করিম খাঁ ছিলেন হিন্দুস্তানি ধ্রুপদি সংগীতের অন্যতম কিংবদন্তি। কিরানা ঘরানারও তিনি কিংবদন্তি ছিলেন। তাঁর সম্পর্কে প্রচলিত—তিনি গান গাওয়ার সময় এমনভাবে ধ্যানমগ্ন হয়ে যেতেন যে, শ্রোতারাও সেই সুরের মায়াজালে আচ্ছন্ন হয়ে পড়তেন।
৬ দিন আগে