সাহস মোস্তাফিজ
সকাল থেকে রাত; ছুটছি, কেবল ছুটছি। ব্যস্ততা। কাল কী হবে, সেই চিন্তায় পালস বেড়ে যায়। কত শত নোটস! ডায়েরি ভরে থাকে পরিকল্পনার কাটাকুটিতে। জীবন যেন এক বুলেট ট্রেন। এক সেকেন্ড এদিক-ওদিক হওয়ার নেই।
আজকাল একটু ফুরসত পেলেই মোবাইলে মাথাটা গুঁজে রাখছি। কত বিনিদ্র রজনী কেটে যাচ্ছে চ্যাট করতে করতে। মধ্যরাতে ক্ষুধার জ্বালায় রাস্তার কুকুরটা ঘেউ করে উঠছে, কানে আসছে না। ব্যস্ত সবাই। ভীষণ ব্যস্ত।
দেদার মোটরসাইকেল কিনছি, যাতে কাজে দ্রুত যাওয়া যায়। প্রচণ্ড জ্যামেও ঘণ্টায় ৭০ কিলো স্পিডে ছুটছি। গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী—৪০ মিনিটে পৌঁছাতে চাই। কখনো উল্টো রাস্তায়, কখনো ফুটপাতে, কখনো ব্রেক সামলাতে না পেরে অন্য গাড়িকে ধাক্কা দিয়েই চলতে থাকি। ভাবটা এমন—একটু দেরি হলেই যেন সব শেষ।
ব্যস্ততার মধ্যে কখনো মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে বাবা বা মায়ের নম্বর। কখনো বিরক্তি নিয়ে ফোনটা ধরে দ্রুত রেখে দেওয়ার তাড়া দেখাই। কখনো ধরিই না। আমাদের যে অনেক কাজ এখন। অনেক ব্যস্ত আমরা।
প্রিয় মানুষের জন্য সময় নেই। ঘুরতে যাওয়ার সময় নেই। ঘুমোনোর সময় নেই। চলতি পথে কাউকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখলে পাশে দাঁড়ানোর সময় নেই। বন্ধুর বিয়েতে যাওয়ার সময় নেই। সময় নেই জোছনা রাতে চাঁদের আলোতে স্নান করার। সময় নেই রাত জাগা তারা গোনার। খেলার মাঠে আজ খেলা নেই। পাড়ার শিশু-কিশোর থেকে বুড়ো সবাই কী কাজে যেন ব্যস্ত। কিসের যেন তাড়া।
এই এত ব্যস্ততার ভিড়ে নিজের জন্য কী জমাচ্ছি আসলে? অর্থ? সেটাও তো হচ্ছে না। যোগ-বিয়োগের হিসাব মেলে না কখনোই। যত পাওয়া, তত চাওয়া যোগ হয়। এটাই জগতের নিয়ম।
এক প্রতিবেদনে জানা গেল, করোনার পর মানুষের হৃদ্রোগের ঝুঁকি বেড়েছে। আজকের পত্রিকায় যোগ দেওয়ার পরই ফাহির ফখরুল করোনায় সংক্রমিত হয়। তাই আমাদের ফাহিরকে আমরা ‘করোনা ফাহির’ বলে ডাকতাম মজা করে। তবে কি সেই করোনাই কেড়ে নিল ফাহিরকে? ভূমিকম্পের যেমন আফটার শক থাকে, তেমন করে করোনাও কি এভাবে কেড়ে নিতে থাকবে তাজা প্রাণ?
ফাহিরের মনে কী চলছিল, জানা নেই। জানার চেষ্টা করেছি কি কখনো? আপনার আশপাশে এখন যে ফাহিরেরা বেঁচে আছে, তাঁদের কষ্ট ভাগ করে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন কখনো? কখনো বসে মনোযোগ দিয়ে কথা শুনেছেন তাঁদের? নাকি ফাহিরেরা কথা শুরু করতেই মোবাইলে চোখ গুঁজে দিয়েছেন।
কদিন আগে আমার আরেক ভাই ‘অপু’ আত্মহনন করল। কী যাতনায় যে নীল হলো একটা তাজা প্রাণ! বেঁচে থাকতে অপুর খবর কজন রেখেছে। কজনকে পাশে পেয়েছে অপু, ফাহিরেরা? মানুষ বেঁচে থাকতে আজকাল কাউকে পাশে পায় না। গুমরে মরে আত্মারা।
ফাহির বাইক চালাত। ঢাকার রাস্তায় যাঁরা বাইক চালান, তাঁরা জানেন, ঢাকার রাস্তাও ফাহিরদের এই অকালমৃত্যুর জন্য দায়ী। প্রতিদিন যে পরিমাণ ধুলো একজন তরুণের নাক দিয়ে ঢুকছে, তা বিষের সমতুল্য।
গত দুবছরে অনেক হারিয়েছি। অনেক সময় চেনা মুখগুলো শেষবারের মতো দেখতে যাওয়াও হয়নি। শেষে নিজের করোনা হয়, এই ভয়ে। এখন পেছনে ফিরে দেখি, চারদিকে এত মানুষের ভিড়ে আমার ওই মানুষগুলো নাই। ইচ্ছে করলেও তাঁদের সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে পারি না। একটু ছুঁয়ে দেখতে পারি না।
কী নিষ্ঠুর বাস্তব! অথচ বেঁচে থাকতে এদের অনেকেই আমার সময় চেয়েছিল। আমি ব্যস্ত ছিলাম। প্রিয় ফাহির, জেনে রেখ, ‘আমি পাই না ছুঁতে তোমায়, আমার একলা লাগে ভারী।’
আরও পড়ুন:
সকাল থেকে রাত; ছুটছি, কেবল ছুটছি। ব্যস্ততা। কাল কী হবে, সেই চিন্তায় পালস বেড়ে যায়। কত শত নোটস! ডায়েরি ভরে থাকে পরিকল্পনার কাটাকুটিতে। জীবন যেন এক বুলেট ট্রেন। এক সেকেন্ড এদিক-ওদিক হওয়ার নেই।
আজকাল একটু ফুরসত পেলেই মোবাইলে মাথাটা গুঁজে রাখছি। কত বিনিদ্র রজনী কেটে যাচ্ছে চ্যাট করতে করতে। মধ্যরাতে ক্ষুধার জ্বালায় রাস্তার কুকুরটা ঘেউ করে উঠছে, কানে আসছে না। ব্যস্ত সবাই। ভীষণ ব্যস্ত।
দেদার মোটরসাইকেল কিনছি, যাতে কাজে দ্রুত যাওয়া যায়। প্রচণ্ড জ্যামেও ঘণ্টায় ৭০ কিলো স্পিডে ছুটছি। গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী—৪০ মিনিটে পৌঁছাতে চাই। কখনো উল্টো রাস্তায়, কখনো ফুটপাতে, কখনো ব্রেক সামলাতে না পেরে অন্য গাড়িকে ধাক্কা দিয়েই চলতে থাকি। ভাবটা এমন—একটু দেরি হলেই যেন সব শেষ।
ব্যস্ততার মধ্যে কখনো মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে বাবা বা মায়ের নম্বর। কখনো বিরক্তি নিয়ে ফোনটা ধরে দ্রুত রেখে দেওয়ার তাড়া দেখাই। কখনো ধরিই না। আমাদের যে অনেক কাজ এখন। অনেক ব্যস্ত আমরা।
প্রিয় মানুষের জন্য সময় নেই। ঘুরতে যাওয়ার সময় নেই। ঘুমোনোর সময় নেই। চলতি পথে কাউকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখলে পাশে দাঁড়ানোর সময় নেই। বন্ধুর বিয়েতে যাওয়ার সময় নেই। সময় নেই জোছনা রাতে চাঁদের আলোতে স্নান করার। সময় নেই রাত জাগা তারা গোনার। খেলার মাঠে আজ খেলা নেই। পাড়ার শিশু-কিশোর থেকে বুড়ো সবাই কী কাজে যেন ব্যস্ত। কিসের যেন তাড়া।
এই এত ব্যস্ততার ভিড়ে নিজের জন্য কী জমাচ্ছি আসলে? অর্থ? সেটাও তো হচ্ছে না। যোগ-বিয়োগের হিসাব মেলে না কখনোই। যত পাওয়া, তত চাওয়া যোগ হয়। এটাই জগতের নিয়ম।
এক প্রতিবেদনে জানা গেল, করোনার পর মানুষের হৃদ্রোগের ঝুঁকি বেড়েছে। আজকের পত্রিকায় যোগ দেওয়ার পরই ফাহির ফখরুল করোনায় সংক্রমিত হয়। তাই আমাদের ফাহিরকে আমরা ‘করোনা ফাহির’ বলে ডাকতাম মজা করে। তবে কি সেই করোনাই কেড়ে নিল ফাহিরকে? ভূমিকম্পের যেমন আফটার শক থাকে, তেমন করে করোনাও কি এভাবে কেড়ে নিতে থাকবে তাজা প্রাণ?
ফাহিরের মনে কী চলছিল, জানা নেই। জানার চেষ্টা করেছি কি কখনো? আপনার আশপাশে এখন যে ফাহিরেরা বেঁচে আছে, তাঁদের কষ্ট ভাগ করে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন কখনো? কখনো বসে মনোযোগ দিয়ে কথা শুনেছেন তাঁদের? নাকি ফাহিরেরা কথা শুরু করতেই মোবাইলে চোখ গুঁজে দিয়েছেন।
কদিন আগে আমার আরেক ভাই ‘অপু’ আত্মহনন করল। কী যাতনায় যে নীল হলো একটা তাজা প্রাণ! বেঁচে থাকতে অপুর খবর কজন রেখেছে। কজনকে পাশে পেয়েছে অপু, ফাহিরেরা? মানুষ বেঁচে থাকতে আজকাল কাউকে পাশে পায় না। গুমরে মরে আত্মারা।
ফাহির বাইক চালাত। ঢাকার রাস্তায় যাঁরা বাইক চালান, তাঁরা জানেন, ঢাকার রাস্তাও ফাহিরদের এই অকালমৃত্যুর জন্য দায়ী। প্রতিদিন যে পরিমাণ ধুলো একজন তরুণের নাক দিয়ে ঢুকছে, তা বিষের সমতুল্য।
গত দুবছরে অনেক হারিয়েছি। অনেক সময় চেনা মুখগুলো শেষবারের মতো দেখতে যাওয়াও হয়নি। শেষে নিজের করোনা হয়, এই ভয়ে। এখন পেছনে ফিরে দেখি, চারদিকে এত মানুষের ভিড়ে আমার ওই মানুষগুলো নাই। ইচ্ছে করলেও তাঁদের সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে পারি না। একটু ছুঁয়ে দেখতে পারি না।
কী নিষ্ঠুর বাস্তব! অথচ বেঁচে থাকতে এদের অনেকেই আমার সময় চেয়েছিল। আমি ব্যস্ত ছিলাম। প্রিয় ফাহির, জেনে রেখ, ‘আমি পাই না ছুঁতে তোমায়, আমার একলা লাগে ভারী।’
আরও পড়ুন:
তারাপদ রায় দুই বাংলার প্রতিষ্ঠিত কবি হলেও তাঁর জন্ম ও শৈশব-কৈশোরের দিনগুলো কেটেছে বাংলাদেশের টাঙ্গাইল শহরে। তিনি ১৯৩৬ সালের ১৭ নভেম্বর টাঙ্গাইল শহরের পূর্ব আদালতপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ছিলেন টাঙ্গাইল জজকোর্টের আইনজীবী।
৭ ঘণ্টা আগেআধুনিক আফ্রিকান সাহিত্যের পুরোধা ব্যক্তিত্ব চিনুয়া আচেবের জন্ম ১৯৩০ সালের ১৬ নভেম্বর নাইজেরিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল ওগিদিতে। তিনি ইবাদান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম স্নাতকদের একজন। লেখাপড়া শেষে নাইজেরিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনে রেডিও প্রযোজক ও এক্সটারনাল ব্রডকাস্টিংয়ের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
১ দিন আগেবারী সিদ্দিকী সংগীতজীবনের প্রথম দিকে বংশীবাদক হিসেবে পরিচিত পেলেও পরবর্তী সময়ে তিনি একজন লোকসংগীতশিল্পী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।
২ দিন আগেতিনি ছিলেন একজন আদর্শবান শিক্ষক—অজিতকুমার গুহর এটাই সবচেয়ে বড় পরিচয়। নিজের জাগতিক উন্নতিকে কখনো বড় করে দেখেননি তিনি। শিক্ষার্থীদের আদর্শ জীবন উপহার দেওয়াই ছিল তাঁর ব্রত। তিনি সক্রিয় ছিলেন ঢাকার প্রগতিশীল সাহিত্য-সাংস্কৃতিক পরিসরেও। সুবক্তা হিসেবে তাঁর খ্যাতির কমতি ছিল না।
৫ দিন আগে