জাহাঙ্গীর আলম
‘সমৃদ্ধ বাংলার’ ঐতিহাসিক প্রমাণাদি বাঙালি জাতীয়তাবাদে ভালোই বাতাস দিয়েছে। তথ্যটি অনেকখানি সত্যি হলেও পাদপ্রদীপের নিচের জনতার কথা খুব কমই শোনা যায়। যেমনটি বিখ্যাত পরিব্রাজক ইবনে বতুতা এই বাংলায় না এলে হয়তো সেই অন্ধকার ইতিহাস জানাই হতো না!
ইবনে বতুতার বিবরণ থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় যে, তখন বাংলায় দাসপ্রথার প্রচলন ছিল। ইবনে বতুতার সাক্ষ্যমতে তখন, উন্মুক্ত বাজারে দাস-দাসী বেচাকেনা হতো। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ইবনে বতুতা বর্ণনা করেছেন, উপপত্নী হিসেবে ব্যবহারযোগ্য এক সুন্দরী তরুণী বাজারে তাঁর সামনেই মাত্র এক স্বর্ণমুদ্রায় বিক্রি হয়েছে। তিনি নিজেও প্রায় একই দামে আশুরা নামে এক যুবতী দাসী কিনেছিলেন। বতুতা বলছেন, এই নারী ছিলেন পরমা সুন্দরী। তাঁর এক সঙ্গী তখন লুলু (মুক্তা) নামে এক সুদর্শন বালককে দুই দিনারে (স্বর্ণমুদ্রা) কিনেছিলেন।
সাদকাঁও (চট্টগ্রাম) শহরে উপস্থিতির সময় থেকে সুনুরকাঁও (সোনারগাঁ) ত্যাগ করে জাভার উদ্দেশে রওনা হওয়া পর্যন্ত সময়কালে বাংলায় ইবনে বতুতার সফরকাল ছিল দুই মাসেরও কম সময় (১৩৪৬ সালের জুলাই ও আগস্ট মাস)।
তাঁর ভ্রমণকাহিনী ১৩৫৫ খ্রিস্টাব্দে গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ হয়। ১৩২৫ থেকে ১৩৫৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সফর সম্পন্ন করে ইবনে বতুতা তাঁর নিজ ভূমি মরক্কোতে ফিরে যান এবং জীবনের অবশিষ্ট সময় সেখানেই কাটান (মৃত্যু ১৩৭৮ খ্রিস্টাব্দ)। তাঁর ভ্রমণকাহিনী সংকলনের নাম রেহলা। পুরো নাম—তুহফাতুন-নুজ্জার ফি গারাইবিল আমসার ওয়া আজাইবিল আস্ফার।
এমনকি অখণ্ড ভারতের আইন কমিশনের ১৮৩৯ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলায় প্রতি পাঁচজনের একজন ছিল ক্রীতদাস। অর্থাৎ সেই সময় এই ভূখণ্ডের ২০ শতাংশ মানুষই পরাধীন জীবনযাপন করতেন। রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে বাংলায়ই সবচেয়ে বেশি ক্রীতদাস ছিল।
১৯৬৩ সালে প্রকাশিত ইবনে বতুতার ভ্রমণ কাহিনীর ইংরেজি সংস্করণ ‘ট্রাভেল ইন এশিয়া অ্যান্ড আফ্রিকা’ অনুসারে, সেই কালে বাংলায় মুরগির দামে মানুষ বেচাকেনা হতো। বিনিময় প্রথা প্রচলিত ছিল। একজন সুন্দরী দাসী পাওয়া যেত আনুমানিক দেড় কেজি (নিশ্চয়ই পরিমাপের অন্য হিসাব তখন ছিল) মুরগির বিনিময়ে। আর একটি যুবকের মূল্য ছিল তিন কেজি মুরগি।
বিভিন্ন সূত্রের বর্ণনা মতে, ক্রীতদাস বেশ সস্তা ছিল, ফলে এই অঞ্চল তখন দাস-বাণিজ্যের হটস্পট হয়ে উঠেছিল। আরব, পূর্ব আফ্রিকা, পারস্য উপসাগর, মরিশাস, ইন্দোনেশিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বিদেশিরা এখানে রেশম আর মশলার পাশাপাশি সস্তা এবং পরিশ্রমী দাস কিনতেও আসত।
এতে সহজেই অনুমেয় যে, এখানে মানুষের মজুরি ছিল অত্যন্ত কম। শ্রমের মূল্যের ভিত্তিতেই মানুষের মূল্য নির্ধারিত হয়। ফলে কর্মঠ গরিব যুবক বিক্রি হতো মুরগির মতোই!
বিষয়টি বোঝা যাবে শায়েস্তা খানের সময়ে রাজস্ব আদায়ের চিত্র দেখলেই। সে সময় মোট জিডিপির ৪৩ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে ৬৪ শতাংশই আসতো সরকারি রাজস্ব থেকে। তার মানে, জনগণকে তাদের আয়ের বড় অংশ রাজা ও জমিদারদের দিতে হতো। ফলে টাকায় আট মণ চাল পাওয়ার যে গল্প সেটি কেবল সত্যি হতে পারে কারণ তখন মানুষের ক্রয় ক্ষমতা আসলেই খুব কম ছিল। ধরে নেওয়া যায়, বাংলায় তখন ভাত ছিল অভিজাতদের খাবার। আর গরিবেরা খেত গম।
ইবনে বতুতার জন্ম ১৩০৪ সালের ১৪ জুন মরক্কোর তাঞ্জিয়ারে। ১৩২৫ সালে ২১ বছর বয়সে তিনি হজ পালন করতে প্রথম মরক্কোর বাইরে যান। মরক্কোতে ফেরেন ২৪ বছর পর। এই ২৪ বছরে তিনি পৃথিবী ঘুরে দেখেছেন, সঙ্গে আরও দুই বার হজ করেছেন। ১৩৩৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ভারতবর্ষে প্রবেশ করেন ইবনে বতুতা।
বলা হয়, ১৩৪৬ সালে হজরত শাহজালালের (রহ) সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে ইবনে বতুতা আসেন বর্তমান বাংলাদেশে। তাঁর বইতে তিনি এ অঞ্চল সম্পর্কে বলেছেন, ‘খোরাসানের লোকেরা দেশটিকে বলে থাকে প্রাচুর্যপূর্ণ দোযখ।’ ইবনে বতুতা ১৩৮৬ সালে মরক্কোয় মারা যান।
‘সমৃদ্ধ বাংলার’ ঐতিহাসিক প্রমাণাদি বাঙালি জাতীয়তাবাদে ভালোই বাতাস দিয়েছে। তথ্যটি অনেকখানি সত্যি হলেও পাদপ্রদীপের নিচের জনতার কথা খুব কমই শোনা যায়। যেমনটি বিখ্যাত পরিব্রাজক ইবনে বতুতা এই বাংলায় না এলে হয়তো সেই অন্ধকার ইতিহাস জানাই হতো না!
ইবনে বতুতার বিবরণ থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় যে, তখন বাংলায় দাসপ্রথার প্রচলন ছিল। ইবনে বতুতার সাক্ষ্যমতে তখন, উন্মুক্ত বাজারে দাস-দাসী বেচাকেনা হতো। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ইবনে বতুতা বর্ণনা করেছেন, উপপত্নী হিসেবে ব্যবহারযোগ্য এক সুন্দরী তরুণী বাজারে তাঁর সামনেই মাত্র এক স্বর্ণমুদ্রায় বিক্রি হয়েছে। তিনি নিজেও প্রায় একই দামে আশুরা নামে এক যুবতী দাসী কিনেছিলেন। বতুতা বলছেন, এই নারী ছিলেন পরমা সুন্দরী। তাঁর এক সঙ্গী তখন লুলু (মুক্তা) নামে এক সুদর্শন বালককে দুই দিনারে (স্বর্ণমুদ্রা) কিনেছিলেন।
সাদকাঁও (চট্টগ্রাম) শহরে উপস্থিতির সময় থেকে সুনুরকাঁও (সোনারগাঁ) ত্যাগ করে জাভার উদ্দেশে রওনা হওয়া পর্যন্ত সময়কালে বাংলায় ইবনে বতুতার সফরকাল ছিল দুই মাসেরও কম সময় (১৩৪৬ সালের জুলাই ও আগস্ট মাস)।
তাঁর ভ্রমণকাহিনী ১৩৫৫ খ্রিস্টাব্দে গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ হয়। ১৩২৫ থেকে ১৩৫৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সফর সম্পন্ন করে ইবনে বতুতা তাঁর নিজ ভূমি মরক্কোতে ফিরে যান এবং জীবনের অবশিষ্ট সময় সেখানেই কাটান (মৃত্যু ১৩৭৮ খ্রিস্টাব্দ)। তাঁর ভ্রমণকাহিনী সংকলনের নাম রেহলা। পুরো নাম—তুহফাতুন-নুজ্জার ফি গারাইবিল আমসার ওয়া আজাইবিল আস্ফার।
এমনকি অখণ্ড ভারতের আইন কমিশনের ১৮৩৯ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলায় প্রতি পাঁচজনের একজন ছিল ক্রীতদাস। অর্থাৎ সেই সময় এই ভূখণ্ডের ২০ শতাংশ মানুষই পরাধীন জীবনযাপন করতেন। রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে বাংলায়ই সবচেয়ে বেশি ক্রীতদাস ছিল।
১৯৬৩ সালে প্রকাশিত ইবনে বতুতার ভ্রমণ কাহিনীর ইংরেজি সংস্করণ ‘ট্রাভেল ইন এশিয়া অ্যান্ড আফ্রিকা’ অনুসারে, সেই কালে বাংলায় মুরগির দামে মানুষ বেচাকেনা হতো। বিনিময় প্রথা প্রচলিত ছিল। একজন সুন্দরী দাসী পাওয়া যেত আনুমানিক দেড় কেজি (নিশ্চয়ই পরিমাপের অন্য হিসাব তখন ছিল) মুরগির বিনিময়ে। আর একটি যুবকের মূল্য ছিল তিন কেজি মুরগি।
বিভিন্ন সূত্রের বর্ণনা মতে, ক্রীতদাস বেশ সস্তা ছিল, ফলে এই অঞ্চল তখন দাস-বাণিজ্যের হটস্পট হয়ে উঠেছিল। আরব, পূর্ব আফ্রিকা, পারস্য উপসাগর, মরিশাস, ইন্দোনেশিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বিদেশিরা এখানে রেশম আর মশলার পাশাপাশি সস্তা এবং পরিশ্রমী দাস কিনতেও আসত।
এতে সহজেই অনুমেয় যে, এখানে মানুষের মজুরি ছিল অত্যন্ত কম। শ্রমের মূল্যের ভিত্তিতেই মানুষের মূল্য নির্ধারিত হয়। ফলে কর্মঠ গরিব যুবক বিক্রি হতো মুরগির মতোই!
বিষয়টি বোঝা যাবে শায়েস্তা খানের সময়ে রাজস্ব আদায়ের চিত্র দেখলেই। সে সময় মোট জিডিপির ৪৩ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে ৬৪ শতাংশই আসতো সরকারি রাজস্ব থেকে। তার মানে, জনগণকে তাদের আয়ের বড় অংশ রাজা ও জমিদারদের দিতে হতো। ফলে টাকায় আট মণ চাল পাওয়ার যে গল্প সেটি কেবল সত্যি হতে পারে কারণ তখন মানুষের ক্রয় ক্ষমতা আসলেই খুব কম ছিল। ধরে নেওয়া যায়, বাংলায় তখন ভাত ছিল অভিজাতদের খাবার। আর গরিবেরা খেত গম।
ইবনে বতুতার জন্ম ১৩০৪ সালের ১৪ জুন মরক্কোর তাঞ্জিয়ারে। ১৩২৫ সালে ২১ বছর বয়সে তিনি হজ পালন করতে প্রথম মরক্কোর বাইরে যান। মরক্কোতে ফেরেন ২৪ বছর পর। এই ২৪ বছরে তিনি পৃথিবী ঘুরে দেখেছেন, সঙ্গে আরও দুই বার হজ করেছেন। ১৩৩৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ভারতবর্ষে প্রবেশ করেন ইবনে বতুতা।
বলা হয়, ১৩৪৬ সালে হজরত শাহজালালের (রহ) সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে ইবনে বতুতা আসেন বর্তমান বাংলাদেশে। তাঁর বইতে তিনি এ অঞ্চল সম্পর্কে বলেছেন, ‘খোরাসানের লোকেরা দেশটিকে বলে থাকে প্রাচুর্যপূর্ণ দোযখ।’ ইবনে বতুতা ১৩৮৬ সালে মরক্কোয় মারা যান।
তারাপদ রায় দুই বাংলার প্রতিষ্ঠিত কবি হলেও তাঁর জন্ম ও শৈশব-কৈশোরের দিনগুলো কেটেছে বাংলাদেশের টাঙ্গাইল শহরে। তিনি ১৯৩৬ সালের ১৭ নভেম্বর টাঙ্গাইল শহরের পূর্ব আদালতপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ছিলেন টাঙ্গাইল জজকোর্টের আইনজীবী।
৩ ঘণ্টা আগেআধুনিক আফ্রিকান সাহিত্যের পুরোধা ব্যক্তিত্ব চিনুয়া আচেবের জন্ম ১৯৩০ সালের ১৬ নভেম্বর নাইজেরিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল ওগিদিতে। তিনি ইবাদান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম স্নাতকদের একজন। লেখাপড়া শেষে নাইজেরিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনে রেডিও প্রযোজক ও এক্সটারনাল ব্রডকাস্টিংয়ের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
১ দিন আগেবারী সিদ্দিকী সংগীতজীবনের প্রথম দিকে বংশীবাদক হিসেবে পরিচিত পেলেও পরবর্তী সময়ে তিনি একজন লোকসংগীতশিল্পী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।
২ দিন আগেতিনি ছিলেন একজন আদর্শবান শিক্ষক—অজিতকুমার গুহর এটাই সবচেয়ে বড় পরিচয়। নিজের জাগতিক উন্নতিকে কখনো বড় করে দেখেননি তিনি। শিক্ষার্থীদের আদর্শ জীবন উপহার দেওয়াই ছিল তাঁর ব্রত। তিনি সক্রিয় ছিলেন ঢাকার প্রগতিশীল সাহিত্য-সাংস্কৃতিক পরিসরেও। সুবক্তা হিসেবে তাঁর খ্যাতির কমতি ছিল না।
৫ দিন আগে