ইজাজুল হক
গজলের ধারাকে নতুন গাম্ভীর্য দেওয়ার যে যাত্রা ফারুক নাজকি শুরু করেন, সেটির পরবর্তী গন্তব্য তাঁর সতেজ-তরতাজা আধুনিক উর্দু কবিতার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়। আধুনিক কবিতা এ যুগে অনেক পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছে। কবিতার বৈশ্বিক অলংকারই একালের উর্দু কবিতার প্রধান নিয়ামক। ফারুক নাজকির কাব্যগ্রন্থ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তাঁর প্রথম দিকের কবিতার তুলনায় শেষের দিকের কবিতাগুলো অনেক বেশি পরিপক্ব, বলিষ্ঠ ও কালোত্তীর্ণ। কবিতার সুর, ধাঁচ ও ভাবের বৈচিত্র্যও এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
নাজকির সর্বশেষ উর্দু কাব্যগ্রন্থ ‘লফ্জ লফ্জ নোহা’-এর কবিতাগুলো তিনি ১৯৯০ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে লিখেছেন। সময়টি কাশ্মীরের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বেদনার ছিল। তিনি কাশ্মীরে বসেই সবকিছু প্রত্যক্ষ করতে থাকেন। চারদিকে দ্রোহের আগুন। ঝিলমে বইছিল রক্তের স্রোত। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ ও করুণ অস্ত্রবাজির মুখে কাশ্মীর জাহান্নামে পরিণত তখন। খুব কাছ থেকে দেখা এসব দৃশ্য নাজকির কবিতাকে প্রভাবিত করে সত্য; তবে কালের ভাষায় নিজের কবিতাকে হারিয়ে যেতে না দেওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা তাঁকে বাস্তববাদী করে তোলে। ফলে কবিতার শরীরে পরিস্থিতির দাগ থাকলেও পুরো কাঠামো বিনির্মাণে তিনি আধুনিক নির্মোহ কাব্যধারা ভালোই রপ্ত করেন।
কাশ্মীরের উত্তাল পরিস্থিতিকে কবিতার ইট-সুরকিতে মিশিয়ে, আধুনিক নিরাসক্ত কবিতার ছাঁচে রেখে, সময়ের সীমারেখা পেরিয়ে, অসীমের আকাশে নাজকি নির্মাণ করেন কবিতার প্রাসাদ। ফলে ফারুকের হাত ধরে কাশ্মীরের বিরাজমান বাস্তবতা কালজয়ী কাব্যভাষায় চিরায়ত সাহিত্যের পাতায় স্থান করে নেয়। ইতিহাস ও সমাজবাস্তবতার তাপ-উত্তাপ থেকে বের হয়ে তা সর্বজনীন সৃষ্টিসুখের উল্লাসে পরিণত হয়। উদাহরণ হিসেবে নাজকির ‘সোনালি দরজার বাইরে’ কবিতাটি দেখা যাক—
‘কম্পিত দেহ
ঘন কুয়াশায় লেপ্টে থাকা রং
আধমরা আলোর কাফন জড়িয়ে
মৃত্যু জনপদের আগুনে নিজেকে সঁপে দেওয়ার আগে
দীর্ঘ সময়জুড়ে
নিজের অনুভবের আঁচ সয়ে যায়।
সন্ধ্যা
আধো আঁধার সড়কে মাথা ঘষতে থাকে
থরথর কাঁপা রাত দুঃখের ছাঁচে-ঢালাই হওয়ার আগে
দীর্ঘ সময়জুড়ে
আলোহীন ঝাড়বাতির পাশে দাঁড়িয়ে রয়।
চাঁদ
আকাশের গভীর নীল সমুদ্রে তারাদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক থেকে
দীর্ঘ সময়জুড়ে
মৃত্যুর জনপদে আগুনের ফুল-লুকানো-খেলা খেলছিল
কবর থেকে কবরে ছায়া নেই, দেহ নেই
পা থেকে পায়ের দূরত্বে ঘরে ফেরার চিহ্নরাও গুম
ঘরের দহলিজ মানবশূন্য
মনিবের পথ চেয়ে-চেয়ে দরজা-কপাট
দীর্ঘ সময়জুড়ে অপেক্ষায় ছিল তবে
কোনো টোকা নেই কিংবা পায়ের আওয়াজ।
এদিকে
নির্বাক শহরের আঁধারে
কম্পিত দেহ
‘কীভাবে ও কত’-এর বদলাতে থাকা প্রান্তে প্রান্তে
বিভ্রান্ত উত্তাল বিক্ষিপ্ত কুঞ্চিত হতে থাকে
এবং ঘন কুয়াশায় লেপ্টে থেকে
ডালে-ডালে আলোর পথ মাড়িয়ে
ক্রুশের ছায়ায় নিশ্বাস নিচ্ছে।
কবিতার কাফনে জড়ানো কম্পিত দেহ, অন্ধকার সড়কে মাথা ঘষতে থাকা সন্ধ্যা, নির্জন-নৈঃশব্দ্যের ভয়কাতর চাঁদ, বিভ্রান্ত উত্তাল নির্বাক শহর কিংবা বৃক্ষে ঝোলানো ক্রুশের ছায়ার সুনির্দিষ্ট একটি সময় আছে। নতুন শহর এবং সমাজের চিত্র শব্দের আঁচড়ে মূর্ত হয়ে উঠেছে সময়ের এই দাগে। যেখানে ভয় আছে, দৃশ্যের বিবরণ আছে, জীবন আছে, অপমানের ধারাবাহিকতা আছে এবং ক্রুশের সেই ছায়া আছে, যা ঘটে যাওয়া বিষয়ের নিদর্শন হয়ে কাঁপতে কাঁপতে জীবনের অস্তিত্ব-প্রয়াণের পয়গাম দিচ্ছে। তবে কবিতার ধাঁচ, ভাব ও কাঠামো সময়কে অতিক্রম করে অসীমে মিলিয়ে গেছে। জগতের যেকোনো প্রান্তের সমাজ বাস্তবতার সঙ্গে অতি সহজিয়া ঢঙে তা মিশে যেতে সক্ষম।
দুই.
নাজকির ‘আমাদের কথা’ কবিতায় পূর্ণ এক যুদ্ধগাথা রচনা করেন। গদ্য ধাঁচের কবিতা হলেও গদ্যের ভাষা তাতে নেই; বরং তা একটি ডাইনামিক কাব্য ধাঁচের প্রতিনিধিত্ব করে। কবিতাটি আপনাকে একালের কাশ্মীরের সঙ্গে, সেখানকার সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যিক কাঠামোর সঙ্গে পরিচিত করাবে। পড়তে-পড়তে আপনার মনে হবে, আধুনিক কবিতায় সৌন্দর্যনীতি থেকে সরে গেছেন নাজকি; বিশদ বিবরণ ও বিশ্লেষণধর্মী গদ্য ধাঁচের রাজনীতি থেকে আঁচল গুটিয়েছেন। কোনো স্বতন্ত্র চরিত্র নির্মাণ না করে ‘আমরা’ ও ‘আমাদের কথা’ বলে ব্যক্তিগত কবিতাকাঠামো নির্মাণ করেছেন। উত্তরাধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকেই কেবল এসব কল্পনা করা যায়। কবিতায় কাশ্মীরকে নির্মোহ দৃষ্টিকোণ থেকে আঁকার প্রয়াস লক্ষণীয়। এ যেন কাশ্মীরের অতীত-বর্তমানের ইতিহাস ও ভূবৈচিত্র্যের নিখুঁত রেখাচিত্র। উপত্যকার সাংস্কৃতিক অবদান প্রকাশ্যে আনার জন্য এটুকুই যথেষ্ট। উত্তর ভারত কাশ্মীরকে কখনো বুঝতে চায়নি। এখানকার স্বতন্ত্র ভূবৈচিত্র্যের প্রতি মোটেও নজর দেয়নি—এমন অভিযোগও তোলেন কবি। দীর্ঘ কবিতাটির এ অংশটি পড়ুন—
‘জুবাইর রেজভির আলি বিন মুত্তাকির কথা মানুষ শোনে
তবে সবজ্ আলি সুকুতির সুর শোনে না
অথচ সেই কুণ্ডলিত সুর আজও পিরপানসালের পর্বতশৃঙ্গে ধাক্কা খেয়ে
শিলাবহরের শিরায়-শিরায় দৌড়ায়;
এর পর বরফ গলা শুরু করলে প্রপাতে-প্রপাতে তার গুঞ্জরণ শোনা যায়
সবজ আলি সুকুতির সুরও দারুণ বৈচিত্র্যময়।’
আধুনিক উর্দু কবি জুবাইর রেজভির কবিতার কাশ্মীরি চরিত্র আলি বিন মুত্তাকির মোটেও এই উপত্যকার প্রতিনিধিত্ব করে না বলে অভিযোগ করেন কবি। অথচ পুরো ভারত তাঁকে নিয়েই মেতে থাকে। অথচ কাশ্মীরের কিংবদন্তি গায়ক সবজ আলি সুকুতির সুরবৈচিত্র্যই উপত্যকার ভূবৈচিত্র্যের সেরা উপমা হতে পারে। কাশ্মীরের সকল সৌন্দর্যের সুর যেন তাঁর গলা দিয়ে বেরিয়ে গভীর নীল আকাশে মেঘ হয়ে ভাসতে থাকে। এক সময় তা কাশ্মীরের পিরপানচালের সুউচ্চ পর্বতশ্রেণিকে একত্ববাদের গান শোনাতে যায়। সেখানে মিলিত হয় উপত্যকার সকল আধ্যাত্মিকতার ধারা। তবে উপত্যকার এমন স্বতন্ত্র রূপ কখনোই উত্তর ভারতের সানগ্লাস পরা চোখে ধরা পড়ে না। ফলে এই উপত্যকাকে উত্তর ভারত কিংবা কাশ্মীরের বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে মেলানোর ব্যর্থ চেষ্টা দেখা যায়।
কবিতার শেষাংশে এসে পাঠককে অবাক করে দিয়ে কবি বলেন—
‘বসন্ত এসে গেছে
তবে গাছে না ধরেছে আপেল, না নাশপাতি
বরং তাতে ধরেছে মানুষের খুলি
আমরা খুব খুশি হলাম
এবং নিমন্ত্রণ করলাম শাহজাদাদের;
এবং অভিবাদন জানালাম তাদের ককটেল ফাটিয়ে।’
এই জায়গায় টিএস এলিয়টের সঙ্গে এক আশ্চর্য মিল রয়েছে নাজকির। এলিয়ট এক কবিতায় বলেন—
‘গত বছর নিজেদের বাগানে তোমরা
যে লাশগুলো বপন করেছিলে—
এত দিনে তা হয়তো ফল-ফুলে পরিণত হয়েছে
এবং থোকায় থোকায় বেরিয়ে পড়েছে।’
এলিয়ট নিজের যুগের অস্থিরতা এবং মানুষের অনুভূতিহীনতা প্রকাশের জন্য জমিতে রোপণ করা লাশের রূপক ব্যবহার করেন। নাজকিও একই অবস্থার বয়ান দিতে গাছে-গাছে মানুষের খুলি ফলার উপমা খুঁজে নেন। ‘আমাদের কথা’য় কাশ্মীরি মানুষের সঙ্গে রাজনীতিবিদদের গাদ্দারির বিরুদ্ধে খোলাখুলি বিদ্রূপ প্রতিভাত হয়।
তিন.
নাজকির আরেকটি উল্লেখযোগ্য কবিতা ‘খুশবুর খোলসে অ্যাসিড’। কবিতাটির শরীর দুঃখের ক্ষত বয়ে বেড়ায়; আত্মপরিচয়ের সন্ধান করেও ব্যর্থ হন কবি। চির নিষ্পাপকালের কোলে শুরু করা কবির জীবনটি আধুনিককালে এসে বিধ্বংসী অ্যাসিডে পরিণত হয়, যা তাঁর নিষ্পাপ চেহারায় দাগের জন্ম দেয় এবং সম্মানের রূপ শোভাকে কলঙ্কিত করে। সময়ের দুটি প্রান্তে ভ্রমণ করে এই কবিতা। একদিকে নির্মল গ্রাম, সৃজনানন্দ ও মুক্ত ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে হাজির হন কবির সহজ-সরল মা, যিনি আপেলের মতো লাল এবং গোলাপের মতো কোমল। অন্যদিকে সময়ের শেষ প্রান্তকে তিনি ‘আমি’-এর ভেতর দিয়ে ধরার চেষ্টা করেন। মাঝখানের সময়টিকে তিনি তাঁর বাবার রূপে দেখতে পান। তবে একটি উপসংহারে পৌঁছেও যেন শেষ পর্যন্ত তিনি জীবনের অর্থ স্পর্শ করতে ব্যর্থ হন। ফলে শেষ লাইনে এসে নিজেকেই প্রশ্ন ছুড়ে দেন—‘আমি কে?’ কবিতাটি পড়া যাক—
‘নিবু পাহাড়ের আঁচলতলে
একটি গ্রাম—
মাদরাবন
জন্মেছিলাম আমি
(আমার নাম মুহাম্মদ ফারুক)
আমার মা ছিলেন আপেলের মতো লাল ও মিষ্টি
গোলাপের মতো কোমল ও সুরভিত
ছিলেন সুঘ্রাণের আকর;
জড়ানো লেপটানো ছলচাতুরী কপটতা মিথ্যা—
এসব শব্দ তিনি শুনেছিলেন সত্য
তবে কখনো পরখ করেননি
মুখে-মুখে আওড়াননি একবারও।
রেডিওতে প্রচারিত হয় নিজার কাব্বানির ভৌতিক কবিতা
অথবা কোনো গায়ক শোনায় কালিদাসের ঋতু সমাচার—
ডুকরে-ডুকরে কাঁদেন তিনি;
আমি কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করি
তিনি বলেন—
দেবতাদের এসব ভাষা
বড়ই জাদুকরী
সত্যের দিশা
এবং সরল পথের পাথেয় রয়েছে এতে;
আমি তাঁর সরলতায় কয়েকবার কেঁদে দিই।
বাবা আমার ডিনামাইট চিবোতেন
আঙুলের মাঝে ফলাতেন অ্যাসিডের বন
এবং মরা পাতলা হলদে কাগজের কপোলে
সাজাতেন রক্তের ফুল
নিজ থেকে পৃথক হয়ে নিজের সঙ্গে মিশে গিয়ে
মায়ায় পড়তে থাকেন নিজেরই সম্পদের;
গোটা আটটি জাহাজের মালিক তিনি—
ভাসিয়েছেন সময়ের সমুদ্রজলে
এবং কন্ট্রোল রুমে বসে নিজেই
নির্ধারণ করতে থাকেন তাদের চলার পথ।
আমিও একটি জাহাজ
পাথর চিবোনো, চোখের পাতার ঝোপে বরই গাছ লাগানো
খুব ভোরে মসজিদের দরোজা দিয়ে আল্লাহর কাছ থেকে
চোখ লুকিয়ে চলে যাওয়া
এবং আল্লাহপ্রেমিকের ভক্ত হয়ে
আল্লাহরই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হওয়া
যার স্বভাবে পরিণত হয়েছে;
লাল মাটির আপেল ও অ্যাসিডের সেই
মিলনের ফসল আমি—
আমি কে?’
কবিতাটি উত্তরাধুনিক কাব্যচিন্তার যথার্থ উদাহরণ। রোনাল্ড বার্থার এই ধরনের সৃজন-অভিজ্ঞতার জন্য শুধু একটি পরিভাষাই প্রণয়ন করেন—‘সিজোফ্রেনিক মুড অব স্পেস অ্যান্ড টাইম’। নাজকির এই কবিতার জন্য যা যথাযথ এবং রূপকগুলোকে স্পষ্ট করে দেওয়ার মতো। স্থান-কালের এই পাগলামি-ধাঁচ নাজকির অন্যান্য কবিতায়ও দেখা যায়। তবে যেসব কবিতায় পরিস্থিতির প্রভাব বেশি থাকে, সেখানে পাগলামির চেয়ে কবিতার মূলভাব স্পষ্ট করার প্রতি বেশি মনোযোগী দেখতে পাই তাঁকে। যেমন—‘শিরোনামগুলো’, ‘একটি শোকগাথা, ‘এ কেমন আবহাওয়া’, ‘রক্তনদী উন্মাতাল’ ‘পরামর্শ’, ‘বনের নামে পদ্য’ এবং ‘১৯৯০-এর এক সকাল’ ইত্যাদি কবিতাগুলো প্রণিধানযোগ্য। এর মধ্যে ‘শিরোনামগুলো’ কবিতাটিতে বর্ণিত ঘটনাপরম্পরা ও বাস্তবতার শ্লেষাত্মক উপস্থাপন পাঠকের অনুভবের জগৎ নাড়িয়ে দেওয়ার মতো। বিশেষ করে এই পঙ্ক্তিগুলো—
‘মাসুমুল ইসলামের মহাপ্রয়াণ—
মুজাহিদ নেতা বাবা-মাকে উপহার দিয়েছেন
পবিত্র কোরআনের একটি কপি
মাসুমুল ইসলামের নিরক্ষর মা মখমলের গেলাফে
মুড়িয়ে সেটি তাকের ওপর রেখে দিয়েছেন;
জানালা দিয়ে উঁকি দেওয়া বাতাস বলল—
‘পড়ো’।’
নাজকির কবিতামানস কিংবদন্তি উর্দু কবি মীরাজির সঙ্গেই বেশি ঘনিষ্ঠ। তাঁর কিছু কবিতায় মীরাজির কঠোরতা, ব্যথার তীব্রতা, অনিন্দ্য ভূ-বর্ণনার মতো উত্তুঙ্গ রূপ দেখা যায়। যেমন ‘মান্টোর সুলতানা বললেন’ কবিতার এ অংশটি দেখুন—
‘দুনিয়া কী করে জানবে—হৃদয়ের গহিনে কত নদী বহমান
আমাদের দেহ তো মহাসড়ক—মানুষের চলাচল থামেই না
চুপচাপ থাকে, নীরবে দুঃখ সয়ে যায় এবং সতত বলে বেড়ায়—
হৃদয়ের রহস্য জানা সেই যোগী কবে আসবে?’
নাজকির কবিতার বিশ্লেষণ নিষ্প্রয়োজন। কবিতার মাধ্যমে জীবনের নতুন সংস্করণের কাজ করেন তিনি। এই কবিতাগুলো আধুনিকতম উর্দু কবিতার নতুন তাঁবু। যেখানে জীবনের উত্তাল তরঙ্গের সঙ্গে আধুনিক দর্শনের হিরে-মুক্তো-জহরত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। নাজকির কবিতা পৃথিবীকে আলোকিত করা এক আলোর ফোয়ারা।
আরও পড়ুন:
গজলের ধারাকে নতুন গাম্ভীর্য দেওয়ার যে যাত্রা ফারুক নাজকি শুরু করেন, সেটির পরবর্তী গন্তব্য তাঁর সতেজ-তরতাজা আধুনিক উর্দু কবিতার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়। আধুনিক কবিতা এ যুগে অনেক পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছে। কবিতার বৈশ্বিক অলংকারই একালের উর্দু কবিতার প্রধান নিয়ামক। ফারুক নাজকির কাব্যগ্রন্থ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তাঁর প্রথম দিকের কবিতার তুলনায় শেষের দিকের কবিতাগুলো অনেক বেশি পরিপক্ব, বলিষ্ঠ ও কালোত্তীর্ণ। কবিতার সুর, ধাঁচ ও ভাবের বৈচিত্র্যও এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
নাজকির সর্বশেষ উর্দু কাব্যগ্রন্থ ‘লফ্জ লফ্জ নোহা’-এর কবিতাগুলো তিনি ১৯৯০ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে লিখেছেন। সময়টি কাশ্মীরের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বেদনার ছিল। তিনি কাশ্মীরে বসেই সবকিছু প্রত্যক্ষ করতে থাকেন। চারদিকে দ্রোহের আগুন। ঝিলমে বইছিল রক্তের স্রোত। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ ও করুণ অস্ত্রবাজির মুখে কাশ্মীর জাহান্নামে পরিণত তখন। খুব কাছ থেকে দেখা এসব দৃশ্য নাজকির কবিতাকে প্রভাবিত করে সত্য; তবে কালের ভাষায় নিজের কবিতাকে হারিয়ে যেতে না দেওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা তাঁকে বাস্তববাদী করে তোলে। ফলে কবিতার শরীরে পরিস্থিতির দাগ থাকলেও পুরো কাঠামো বিনির্মাণে তিনি আধুনিক নির্মোহ কাব্যধারা ভালোই রপ্ত করেন।
কাশ্মীরের উত্তাল পরিস্থিতিকে কবিতার ইট-সুরকিতে মিশিয়ে, আধুনিক নিরাসক্ত কবিতার ছাঁচে রেখে, সময়ের সীমারেখা পেরিয়ে, অসীমের আকাশে নাজকি নির্মাণ করেন কবিতার প্রাসাদ। ফলে ফারুকের হাত ধরে কাশ্মীরের বিরাজমান বাস্তবতা কালজয়ী কাব্যভাষায় চিরায়ত সাহিত্যের পাতায় স্থান করে নেয়। ইতিহাস ও সমাজবাস্তবতার তাপ-উত্তাপ থেকে বের হয়ে তা সর্বজনীন সৃষ্টিসুখের উল্লাসে পরিণত হয়। উদাহরণ হিসেবে নাজকির ‘সোনালি দরজার বাইরে’ কবিতাটি দেখা যাক—
‘কম্পিত দেহ
ঘন কুয়াশায় লেপ্টে থাকা রং
আধমরা আলোর কাফন জড়িয়ে
মৃত্যু জনপদের আগুনে নিজেকে সঁপে দেওয়ার আগে
দীর্ঘ সময়জুড়ে
নিজের অনুভবের আঁচ সয়ে যায়।
সন্ধ্যা
আধো আঁধার সড়কে মাথা ঘষতে থাকে
থরথর কাঁপা রাত দুঃখের ছাঁচে-ঢালাই হওয়ার আগে
দীর্ঘ সময়জুড়ে
আলোহীন ঝাড়বাতির পাশে দাঁড়িয়ে রয়।
চাঁদ
আকাশের গভীর নীল সমুদ্রে তারাদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক থেকে
দীর্ঘ সময়জুড়ে
মৃত্যুর জনপদে আগুনের ফুল-লুকানো-খেলা খেলছিল
কবর থেকে কবরে ছায়া নেই, দেহ নেই
পা থেকে পায়ের দূরত্বে ঘরে ফেরার চিহ্নরাও গুম
ঘরের দহলিজ মানবশূন্য
মনিবের পথ চেয়ে-চেয়ে দরজা-কপাট
দীর্ঘ সময়জুড়ে অপেক্ষায় ছিল তবে
কোনো টোকা নেই কিংবা পায়ের আওয়াজ।
এদিকে
নির্বাক শহরের আঁধারে
কম্পিত দেহ
‘কীভাবে ও কত’-এর বদলাতে থাকা প্রান্তে প্রান্তে
বিভ্রান্ত উত্তাল বিক্ষিপ্ত কুঞ্চিত হতে থাকে
এবং ঘন কুয়াশায় লেপ্টে থেকে
ডালে-ডালে আলোর পথ মাড়িয়ে
ক্রুশের ছায়ায় নিশ্বাস নিচ্ছে।
কবিতার কাফনে জড়ানো কম্পিত দেহ, অন্ধকার সড়কে মাথা ঘষতে থাকা সন্ধ্যা, নির্জন-নৈঃশব্দ্যের ভয়কাতর চাঁদ, বিভ্রান্ত উত্তাল নির্বাক শহর কিংবা বৃক্ষে ঝোলানো ক্রুশের ছায়ার সুনির্দিষ্ট একটি সময় আছে। নতুন শহর এবং সমাজের চিত্র শব্দের আঁচড়ে মূর্ত হয়ে উঠেছে সময়ের এই দাগে। যেখানে ভয় আছে, দৃশ্যের বিবরণ আছে, জীবন আছে, অপমানের ধারাবাহিকতা আছে এবং ক্রুশের সেই ছায়া আছে, যা ঘটে যাওয়া বিষয়ের নিদর্শন হয়ে কাঁপতে কাঁপতে জীবনের অস্তিত্ব-প্রয়াণের পয়গাম দিচ্ছে। তবে কবিতার ধাঁচ, ভাব ও কাঠামো সময়কে অতিক্রম করে অসীমে মিলিয়ে গেছে। জগতের যেকোনো প্রান্তের সমাজ বাস্তবতার সঙ্গে অতি সহজিয়া ঢঙে তা মিশে যেতে সক্ষম।
দুই.
নাজকির ‘আমাদের কথা’ কবিতায় পূর্ণ এক যুদ্ধগাথা রচনা করেন। গদ্য ধাঁচের কবিতা হলেও গদ্যের ভাষা তাতে নেই; বরং তা একটি ডাইনামিক কাব্য ধাঁচের প্রতিনিধিত্ব করে। কবিতাটি আপনাকে একালের কাশ্মীরের সঙ্গে, সেখানকার সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যিক কাঠামোর সঙ্গে পরিচিত করাবে। পড়তে-পড়তে আপনার মনে হবে, আধুনিক কবিতায় সৌন্দর্যনীতি থেকে সরে গেছেন নাজকি; বিশদ বিবরণ ও বিশ্লেষণধর্মী গদ্য ধাঁচের রাজনীতি থেকে আঁচল গুটিয়েছেন। কোনো স্বতন্ত্র চরিত্র নির্মাণ না করে ‘আমরা’ ও ‘আমাদের কথা’ বলে ব্যক্তিগত কবিতাকাঠামো নির্মাণ করেছেন। উত্তরাধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকেই কেবল এসব কল্পনা করা যায়। কবিতায় কাশ্মীরকে নির্মোহ দৃষ্টিকোণ থেকে আঁকার প্রয়াস লক্ষণীয়। এ যেন কাশ্মীরের অতীত-বর্তমানের ইতিহাস ও ভূবৈচিত্র্যের নিখুঁত রেখাচিত্র। উপত্যকার সাংস্কৃতিক অবদান প্রকাশ্যে আনার জন্য এটুকুই যথেষ্ট। উত্তর ভারত কাশ্মীরকে কখনো বুঝতে চায়নি। এখানকার স্বতন্ত্র ভূবৈচিত্র্যের প্রতি মোটেও নজর দেয়নি—এমন অভিযোগও তোলেন কবি। দীর্ঘ কবিতাটির এ অংশটি পড়ুন—
‘জুবাইর রেজভির আলি বিন মুত্তাকির কথা মানুষ শোনে
তবে সবজ্ আলি সুকুতির সুর শোনে না
অথচ সেই কুণ্ডলিত সুর আজও পিরপানসালের পর্বতশৃঙ্গে ধাক্কা খেয়ে
শিলাবহরের শিরায়-শিরায় দৌড়ায়;
এর পর বরফ গলা শুরু করলে প্রপাতে-প্রপাতে তার গুঞ্জরণ শোনা যায়
সবজ আলি সুকুতির সুরও দারুণ বৈচিত্র্যময়।’
আধুনিক উর্দু কবি জুবাইর রেজভির কবিতার কাশ্মীরি চরিত্র আলি বিন মুত্তাকির মোটেও এই উপত্যকার প্রতিনিধিত্ব করে না বলে অভিযোগ করেন কবি। অথচ পুরো ভারত তাঁকে নিয়েই মেতে থাকে। অথচ কাশ্মীরের কিংবদন্তি গায়ক সবজ আলি সুকুতির সুরবৈচিত্র্যই উপত্যকার ভূবৈচিত্র্যের সেরা উপমা হতে পারে। কাশ্মীরের সকল সৌন্দর্যের সুর যেন তাঁর গলা দিয়ে বেরিয়ে গভীর নীল আকাশে মেঘ হয়ে ভাসতে থাকে। এক সময় তা কাশ্মীরের পিরপানচালের সুউচ্চ পর্বতশ্রেণিকে একত্ববাদের গান শোনাতে যায়। সেখানে মিলিত হয় উপত্যকার সকল আধ্যাত্মিকতার ধারা। তবে উপত্যকার এমন স্বতন্ত্র রূপ কখনোই উত্তর ভারতের সানগ্লাস পরা চোখে ধরা পড়ে না। ফলে এই উপত্যকাকে উত্তর ভারত কিংবা কাশ্মীরের বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে মেলানোর ব্যর্থ চেষ্টা দেখা যায়।
কবিতার শেষাংশে এসে পাঠককে অবাক করে দিয়ে কবি বলেন—
‘বসন্ত এসে গেছে
তবে গাছে না ধরেছে আপেল, না নাশপাতি
বরং তাতে ধরেছে মানুষের খুলি
আমরা খুব খুশি হলাম
এবং নিমন্ত্রণ করলাম শাহজাদাদের;
এবং অভিবাদন জানালাম তাদের ককটেল ফাটিয়ে।’
এই জায়গায় টিএস এলিয়টের সঙ্গে এক আশ্চর্য মিল রয়েছে নাজকির। এলিয়ট এক কবিতায় বলেন—
‘গত বছর নিজেদের বাগানে তোমরা
যে লাশগুলো বপন করেছিলে—
এত দিনে তা হয়তো ফল-ফুলে পরিণত হয়েছে
এবং থোকায় থোকায় বেরিয়ে পড়েছে।’
এলিয়ট নিজের যুগের অস্থিরতা এবং মানুষের অনুভূতিহীনতা প্রকাশের জন্য জমিতে রোপণ করা লাশের রূপক ব্যবহার করেন। নাজকিও একই অবস্থার বয়ান দিতে গাছে-গাছে মানুষের খুলি ফলার উপমা খুঁজে নেন। ‘আমাদের কথা’য় কাশ্মীরি মানুষের সঙ্গে রাজনীতিবিদদের গাদ্দারির বিরুদ্ধে খোলাখুলি বিদ্রূপ প্রতিভাত হয়।
তিন.
নাজকির আরেকটি উল্লেখযোগ্য কবিতা ‘খুশবুর খোলসে অ্যাসিড’। কবিতাটির শরীর দুঃখের ক্ষত বয়ে বেড়ায়; আত্মপরিচয়ের সন্ধান করেও ব্যর্থ হন কবি। চির নিষ্পাপকালের কোলে শুরু করা কবির জীবনটি আধুনিককালে এসে বিধ্বংসী অ্যাসিডে পরিণত হয়, যা তাঁর নিষ্পাপ চেহারায় দাগের জন্ম দেয় এবং সম্মানের রূপ শোভাকে কলঙ্কিত করে। সময়ের দুটি প্রান্তে ভ্রমণ করে এই কবিতা। একদিকে নির্মল গ্রাম, সৃজনানন্দ ও মুক্ত ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে হাজির হন কবির সহজ-সরল মা, যিনি আপেলের মতো লাল এবং গোলাপের মতো কোমল। অন্যদিকে সময়ের শেষ প্রান্তকে তিনি ‘আমি’-এর ভেতর দিয়ে ধরার চেষ্টা করেন। মাঝখানের সময়টিকে তিনি তাঁর বাবার রূপে দেখতে পান। তবে একটি উপসংহারে পৌঁছেও যেন শেষ পর্যন্ত তিনি জীবনের অর্থ স্পর্শ করতে ব্যর্থ হন। ফলে শেষ লাইনে এসে নিজেকেই প্রশ্ন ছুড়ে দেন—‘আমি কে?’ কবিতাটি পড়া যাক—
‘নিবু পাহাড়ের আঁচলতলে
একটি গ্রাম—
মাদরাবন
জন্মেছিলাম আমি
(আমার নাম মুহাম্মদ ফারুক)
আমার মা ছিলেন আপেলের মতো লাল ও মিষ্টি
গোলাপের মতো কোমল ও সুরভিত
ছিলেন সুঘ্রাণের আকর;
জড়ানো লেপটানো ছলচাতুরী কপটতা মিথ্যা—
এসব শব্দ তিনি শুনেছিলেন সত্য
তবে কখনো পরখ করেননি
মুখে-মুখে আওড়াননি একবারও।
রেডিওতে প্রচারিত হয় নিজার কাব্বানির ভৌতিক কবিতা
অথবা কোনো গায়ক শোনায় কালিদাসের ঋতু সমাচার—
ডুকরে-ডুকরে কাঁদেন তিনি;
আমি কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করি
তিনি বলেন—
দেবতাদের এসব ভাষা
বড়ই জাদুকরী
সত্যের দিশা
এবং সরল পথের পাথেয় রয়েছে এতে;
আমি তাঁর সরলতায় কয়েকবার কেঁদে দিই।
বাবা আমার ডিনামাইট চিবোতেন
আঙুলের মাঝে ফলাতেন অ্যাসিডের বন
এবং মরা পাতলা হলদে কাগজের কপোলে
সাজাতেন রক্তের ফুল
নিজ থেকে পৃথক হয়ে নিজের সঙ্গে মিশে গিয়ে
মায়ায় পড়তে থাকেন নিজেরই সম্পদের;
গোটা আটটি জাহাজের মালিক তিনি—
ভাসিয়েছেন সময়ের সমুদ্রজলে
এবং কন্ট্রোল রুমে বসে নিজেই
নির্ধারণ করতে থাকেন তাদের চলার পথ।
আমিও একটি জাহাজ
পাথর চিবোনো, চোখের পাতার ঝোপে বরই গাছ লাগানো
খুব ভোরে মসজিদের দরোজা দিয়ে আল্লাহর কাছ থেকে
চোখ লুকিয়ে চলে যাওয়া
এবং আল্লাহপ্রেমিকের ভক্ত হয়ে
আল্লাহরই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হওয়া
যার স্বভাবে পরিণত হয়েছে;
লাল মাটির আপেল ও অ্যাসিডের সেই
মিলনের ফসল আমি—
আমি কে?’
কবিতাটি উত্তরাধুনিক কাব্যচিন্তার যথার্থ উদাহরণ। রোনাল্ড বার্থার এই ধরনের সৃজন-অভিজ্ঞতার জন্য শুধু একটি পরিভাষাই প্রণয়ন করেন—‘সিজোফ্রেনিক মুড অব স্পেস অ্যান্ড টাইম’। নাজকির এই কবিতার জন্য যা যথাযথ এবং রূপকগুলোকে স্পষ্ট করে দেওয়ার মতো। স্থান-কালের এই পাগলামি-ধাঁচ নাজকির অন্যান্য কবিতায়ও দেখা যায়। তবে যেসব কবিতায় পরিস্থিতির প্রভাব বেশি থাকে, সেখানে পাগলামির চেয়ে কবিতার মূলভাব স্পষ্ট করার প্রতি বেশি মনোযোগী দেখতে পাই তাঁকে। যেমন—‘শিরোনামগুলো’, ‘একটি শোকগাথা, ‘এ কেমন আবহাওয়া’, ‘রক্তনদী উন্মাতাল’ ‘পরামর্শ’, ‘বনের নামে পদ্য’ এবং ‘১৯৯০-এর এক সকাল’ ইত্যাদি কবিতাগুলো প্রণিধানযোগ্য। এর মধ্যে ‘শিরোনামগুলো’ কবিতাটিতে বর্ণিত ঘটনাপরম্পরা ও বাস্তবতার শ্লেষাত্মক উপস্থাপন পাঠকের অনুভবের জগৎ নাড়িয়ে দেওয়ার মতো। বিশেষ করে এই পঙ্ক্তিগুলো—
‘মাসুমুল ইসলামের মহাপ্রয়াণ—
মুজাহিদ নেতা বাবা-মাকে উপহার দিয়েছেন
পবিত্র কোরআনের একটি কপি
মাসুমুল ইসলামের নিরক্ষর মা মখমলের গেলাফে
মুড়িয়ে সেটি তাকের ওপর রেখে দিয়েছেন;
জানালা দিয়ে উঁকি দেওয়া বাতাস বলল—
‘পড়ো’।’
নাজকির কবিতামানস কিংবদন্তি উর্দু কবি মীরাজির সঙ্গেই বেশি ঘনিষ্ঠ। তাঁর কিছু কবিতায় মীরাজির কঠোরতা, ব্যথার তীব্রতা, অনিন্দ্য ভূ-বর্ণনার মতো উত্তুঙ্গ রূপ দেখা যায়। যেমন ‘মান্টোর সুলতানা বললেন’ কবিতার এ অংশটি দেখুন—
‘দুনিয়া কী করে জানবে—হৃদয়ের গহিনে কত নদী বহমান
আমাদের দেহ তো মহাসড়ক—মানুষের চলাচল থামেই না
চুপচাপ থাকে, নীরবে দুঃখ সয়ে যায় এবং সতত বলে বেড়ায়—
হৃদয়ের রহস্য জানা সেই যোগী কবে আসবে?’
নাজকির কবিতার বিশ্লেষণ নিষ্প্রয়োজন। কবিতার মাধ্যমে জীবনের নতুন সংস্করণের কাজ করেন তিনি। এই কবিতাগুলো আধুনিকতম উর্দু কবিতার নতুন তাঁবু। যেখানে জীবনের উত্তাল তরঙ্গের সঙ্গে আধুনিক দর্শনের হিরে-মুক্তো-জহরত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। নাজকির কবিতা পৃথিবীকে আলোকিত করা এক আলোর ফোয়ারা।
আরও পড়ুন:
আধুনিক আফ্রিকান সাহিত্যের পুরোধা ব্যক্তিত্ব চিনুয়া আচেবের জন্ম ১৯৩০ সালের ১৬ নভেম্বর নাইজেরিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল ওগিদিতে। তিনি ইবাদান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম স্নাতকদের একজন। লেখাপড়া শেষে নাইজেরিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনে রেডিও প্রযোজক ও এক্সটারনাল ব্রডকাস্টিংয়ের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
২১ ঘণ্টা আগেবারী সিদ্দিকী সংগীতজীবনের প্রথম দিকে বংশীবাদক হিসেবে পরিচিত পেলেও পরবর্তী সময়ে তিনি একজন লোকসংগীতশিল্পী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।
২ দিন আগেতিনি ছিলেন একজন আদর্শবান শিক্ষক—অজিতকুমার গুহর এটাই সবচেয়ে বড় পরিচয়। নিজের জাগতিক উন্নতিকে কখনো বড় করে দেখেননি তিনি। শিক্ষার্থীদের আদর্শ জীবন উপহার দেওয়াই ছিল তাঁর ব্রত। তিনি সক্রিয় ছিলেন ঢাকার প্রগতিশীল সাহিত্য-সাংস্কৃতিক পরিসরেও। সুবক্তা হিসেবে তাঁর খ্যাতির কমতি ছিল না।
৫ দিন আগেআব্দুল করিম খাঁ ছিলেন হিন্দুস্তানি ধ্রুপদি সংগীতের অন্যতম কিংবদন্তি। কিরানা ঘরানারও তিনি কিংবদন্তি ছিলেন। তাঁর সম্পর্কে প্রচলিত—তিনি গান গাওয়ার সময় এমনভাবে ধ্যানমগ্ন হয়ে যেতেন যে, শ্রোতারাও সেই সুরের মায়াজালে আচ্ছন্ন হয়ে পড়তেন।
৬ দিন আগে