রিক্তা রিচি
২৭ তারিখ ছিল আজকের পত্রিকার প্রথম বর্ষপূর্তি। আমাদের মনে আনন্দের জোয়ার। পুরো অফিসে হইচই-রইরই ব্যাপার। সহকর্মীদের সঙ্গে খোশগল্প, ফটোসেশন এবং কাজের ফাঁকে ফাঁকে চোখ বোলাচ্ছিলাম আজকের পত্রিকার অনলাইনে। খবরটা পাওয়ার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। মুহূর্তেই যেন আমাদের আনন্দমুখর আঙিনায় কালো মেঘ নেমে এল। বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। সাভারের আশুলিয়ায় ছাত্রের স্টাম্পের আঘাতে আহত শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার মারা গেছেন। স্তব্ধ লাগছিল। গত ২৫ জুন একজন শিক্ষক তাঁরই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রের দ্বারা অপমানিত, লাঞ্ছিত ও নির্যাতিত হয়েছেন এবং সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন। বিষয়টা কতটা ভয়ংকর! যে স্কুলে তিনি গত ১০ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন, যিনি স্কুলের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন নিয়ম মানার জন্য বলতেন, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা হলে যে শিক্ষক উত্ত্যক্তকারীদের শাসন করতেন, সেই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র তাঁকে স্কুলের মাঠে প্রকাশ্যে স্টাম্প দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। একজন শিক্ষকের নৈতিকতার পুরস্কার কি লাঞ্ছনা, অপমান ও মৃত্যু?
এর কিছুদিন আগের ঘটনা। ঘটেছে নড়াইলে। নড়াইল সদর উপজেলায় মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে প্রকাশ্যে জুতার মালা পরানো হয়েছে। অভিযোগ, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত। এ ঘটনা ঘটেছে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে! বিষয়টা কতটা মর্মান্তিক, লজ্জাজনক ও ভয়ংকর ভেবে দেখুন। ওই প্রতিষ্ঠানে এমনকি কেউ নেই যে মানুষকে মানুষ বলে গণ্য করতে জানে! একজন শিক্ষক তো মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষককে বলা হয় জাতির মেরুদণ্ড। তাহলে আমরা কি আমাদের মেরুদণ্ডকে চপেটাঘাত করছি না? শিক্ষকের অপমান কি আমাদের ব্যক্তিগত অপমান নয়? একজন শিক্ষকের কাছে তো আমাদের নতজানু হওয়ার কথা। শিক্ষকের সামনে তো মাথা নিচু থাকার কথা। যেমনটা পড়েছিলাম কবি কাজী কাদের নেওয়াজের ‘শিক্ষকের মর্যাদা’ কবিতায়। ‘শিক্ষকের মর্যাদা’ কবিতাটি আমাদের পাঠ্যবইয়ে ছিল। কবিতাটি আমার ভীষণ পছন্দের। সেখানে একটি চরণ ছিল ‘আজ হতে চির-উন্নত হল শিক্ষাগুরুর শির’। অথচ বাস্তবিক অর্থে শিক্ষাগুরুর মাথা নিচু হতে হতে মূলোৎপাটিত হয়ে যাচ্ছে।
এখন অহরহ শোনা যায় বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষকের অপমান। নিশ্চয় বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের কথা মনে আছে। ধর্ম অবমাননার দায়ে মুন্সিগঞ্জের এই শিক্ষককে আটক করা হয়েছিল। একজন শিক্ষার্থীর প্রশ্নের জবাবে ধর্ম আর বিজ্ঞানের পার্থক্য নিয়ে আলোচনা করেছিলেন হৃদয়। সেটা গোপনে ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয় এবং পরে তাঁকে আটক করা হয়। জেল খাটতে হয়। পরে ছাড়া পেয়ে আঘাতের ক্ষত ভুলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যান তিনি। আবারও কর্মস্থলে ফিরে যান সন্দেহ ও ভয় নিয়ে। হৃদয় উজাড় করে ছাত্রদের ক্ষমা করে দেন।
ধর্ম অবমাননার অভিযোগ, নৈতিকতা ও নিয়ম শেখানোর দায়ে যদি শিক্ষককে লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়, ছাত্রদের কাছে অপমানিত হতে হয়, তাহলে সামনের পরিস্থিতি আরও কী হতে পারে ভেবে দেখেছেন? কতটা নাজুক, ভঙ্গুর হয়ে যাচ্ছে আমাদের সমাজ? শিক্ষকের ব্যক্তিগত অনৈতিকতা, অসভ্যতা যেমন কাম্য নয়, ঠিক তেমনি একজন সৎ শিক্ষকের অপমান, লাঞ্ছনাও সইবার নয়। ছোট থেকে জেনে আসছি, মেনে আসছি শিক্ষক হলো পিতার মতো। শিক্ষক একজন মানুষকে মানুষ করে গড়ে তোলেন। শিক্ষকের বয়স যত বেশি কিংবা কম হোক না কেন, সব সময় ভয় পেতাম। শিক্ষকের সামনে দিয়ে হাঁটতে, দুষ্টুমি করতে ভয় পেতাম। এমনকি বড়দের সামনেও।
আগে একটা বিষয় খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হতো। স্কুলে সন্তানকে ভর্তি করানোর সময় এবং প্যারেন্টস মিটিংয়ে অভিভাবক শিক্ষককে বলতেন তিনি যেন তাঁর (সেই অভিভাবকের) সন্তানকে শাসন করেন। সন্তান ভুল করলে যেন ভুল ধরিয়ে দেন। অথচ এখন দেখা যায় শাসন করার কারণে শিক্ষককে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হচ্ছে।
আমার অগ্রজদের দেখেছি শিক্ষকের সঙ্গে নত হয়ে কথা বলতে। আমিও ঠিক যথাসম্ভব তা করার চেষ্টা করেছি। দেখা হলেই সালাম দিয়ে কুশল বিনিময়ের চেষ্টা করি। অথচ দিনকে দিন দেখছি শিক্ষার্থীরা অসহিষ্ণু, বেয়াদব হয়ে যাচ্ছে। এই দায় কার আসলে? পরিবার, প্রতিষ্ঠান, নাকি শিক্ষকেরই? প্রশ্নটা রেখে গেলাম।
২৭ তারিখ ছিল আজকের পত্রিকার প্রথম বর্ষপূর্তি। আমাদের মনে আনন্দের জোয়ার। পুরো অফিসে হইচই-রইরই ব্যাপার। সহকর্মীদের সঙ্গে খোশগল্প, ফটোসেশন এবং কাজের ফাঁকে ফাঁকে চোখ বোলাচ্ছিলাম আজকের পত্রিকার অনলাইনে। খবরটা পাওয়ার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। মুহূর্তেই যেন আমাদের আনন্দমুখর আঙিনায় কালো মেঘ নেমে এল। বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। সাভারের আশুলিয়ায় ছাত্রের স্টাম্পের আঘাতে আহত শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার মারা গেছেন। স্তব্ধ লাগছিল। গত ২৫ জুন একজন শিক্ষক তাঁরই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রের দ্বারা অপমানিত, লাঞ্ছিত ও নির্যাতিত হয়েছেন এবং সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন। বিষয়টা কতটা ভয়ংকর! যে স্কুলে তিনি গত ১০ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন, যিনি স্কুলের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন নিয়ম মানার জন্য বলতেন, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা হলে যে শিক্ষক উত্ত্যক্তকারীদের শাসন করতেন, সেই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র তাঁকে স্কুলের মাঠে প্রকাশ্যে স্টাম্প দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। একজন শিক্ষকের নৈতিকতার পুরস্কার কি লাঞ্ছনা, অপমান ও মৃত্যু?
এর কিছুদিন আগের ঘটনা। ঘটেছে নড়াইলে। নড়াইল সদর উপজেলায় মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে প্রকাশ্যে জুতার মালা পরানো হয়েছে। অভিযোগ, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত। এ ঘটনা ঘটেছে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে! বিষয়টা কতটা মর্মান্তিক, লজ্জাজনক ও ভয়ংকর ভেবে দেখুন। ওই প্রতিষ্ঠানে এমনকি কেউ নেই যে মানুষকে মানুষ বলে গণ্য করতে জানে! একজন শিক্ষক তো মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষককে বলা হয় জাতির মেরুদণ্ড। তাহলে আমরা কি আমাদের মেরুদণ্ডকে চপেটাঘাত করছি না? শিক্ষকের অপমান কি আমাদের ব্যক্তিগত অপমান নয়? একজন শিক্ষকের কাছে তো আমাদের নতজানু হওয়ার কথা। শিক্ষকের সামনে তো মাথা নিচু থাকার কথা। যেমনটা পড়েছিলাম কবি কাজী কাদের নেওয়াজের ‘শিক্ষকের মর্যাদা’ কবিতায়। ‘শিক্ষকের মর্যাদা’ কবিতাটি আমাদের পাঠ্যবইয়ে ছিল। কবিতাটি আমার ভীষণ পছন্দের। সেখানে একটি চরণ ছিল ‘আজ হতে চির-উন্নত হল শিক্ষাগুরুর শির’। অথচ বাস্তবিক অর্থে শিক্ষাগুরুর মাথা নিচু হতে হতে মূলোৎপাটিত হয়ে যাচ্ছে।
এখন অহরহ শোনা যায় বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষকের অপমান। নিশ্চয় বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের কথা মনে আছে। ধর্ম অবমাননার দায়ে মুন্সিগঞ্জের এই শিক্ষককে আটক করা হয়েছিল। একজন শিক্ষার্থীর প্রশ্নের জবাবে ধর্ম আর বিজ্ঞানের পার্থক্য নিয়ে আলোচনা করেছিলেন হৃদয়। সেটা গোপনে ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয় এবং পরে তাঁকে আটক করা হয়। জেল খাটতে হয়। পরে ছাড়া পেয়ে আঘাতের ক্ষত ভুলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যান তিনি। আবারও কর্মস্থলে ফিরে যান সন্দেহ ও ভয় নিয়ে। হৃদয় উজাড় করে ছাত্রদের ক্ষমা করে দেন।
ধর্ম অবমাননার অভিযোগ, নৈতিকতা ও নিয়ম শেখানোর দায়ে যদি শিক্ষককে লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়, ছাত্রদের কাছে অপমানিত হতে হয়, তাহলে সামনের পরিস্থিতি আরও কী হতে পারে ভেবে দেখেছেন? কতটা নাজুক, ভঙ্গুর হয়ে যাচ্ছে আমাদের সমাজ? শিক্ষকের ব্যক্তিগত অনৈতিকতা, অসভ্যতা যেমন কাম্য নয়, ঠিক তেমনি একজন সৎ শিক্ষকের অপমান, লাঞ্ছনাও সইবার নয়। ছোট থেকে জেনে আসছি, মেনে আসছি শিক্ষক হলো পিতার মতো। শিক্ষক একজন মানুষকে মানুষ করে গড়ে তোলেন। শিক্ষকের বয়স যত বেশি কিংবা কম হোক না কেন, সব সময় ভয় পেতাম। শিক্ষকের সামনে দিয়ে হাঁটতে, দুষ্টুমি করতে ভয় পেতাম। এমনকি বড়দের সামনেও।
আগে একটা বিষয় খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হতো। স্কুলে সন্তানকে ভর্তি করানোর সময় এবং প্যারেন্টস মিটিংয়ে অভিভাবক শিক্ষককে বলতেন তিনি যেন তাঁর (সেই অভিভাবকের) সন্তানকে শাসন করেন। সন্তান ভুল করলে যেন ভুল ধরিয়ে দেন। অথচ এখন দেখা যায় শাসন করার কারণে শিক্ষককে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হচ্ছে।
আমার অগ্রজদের দেখেছি শিক্ষকের সঙ্গে নত হয়ে কথা বলতে। আমিও ঠিক যথাসম্ভব তা করার চেষ্টা করেছি। দেখা হলেই সালাম দিয়ে কুশল বিনিময়ের চেষ্টা করি। অথচ দিনকে দিন দেখছি শিক্ষার্থীরা অসহিষ্ণু, বেয়াদব হয়ে যাচ্ছে। এই দায় কার আসলে? পরিবার, প্রতিষ্ঠান, নাকি শিক্ষকেরই? প্রশ্নটা রেখে গেলাম।
তারাপদ রায় দুই বাংলার প্রতিষ্ঠিত কবি হলেও তাঁর জন্ম ও শৈশব-কৈশোরের দিনগুলো কেটেছে বাংলাদেশের টাঙ্গাইল শহরে। তিনি ১৯৩৬ সালের ১৭ নভেম্বর টাঙ্গাইল শহরের পূর্ব আদালতপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ছিলেন টাঙ্গাইল জজকোর্টের আইনজীবী।
১৭ মিনিট আগেআধুনিক আফ্রিকান সাহিত্যের পুরোধা ব্যক্তিত্ব চিনুয়া আচেবের জন্ম ১৯৩০ সালের ১৬ নভেম্বর নাইজেরিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল ওগিদিতে। তিনি ইবাদান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম স্নাতকদের একজন। লেখাপড়া শেষে নাইজেরিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনে রেডিও প্রযোজক ও এক্সটারনাল ব্রডকাস্টিংয়ের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
১ দিন আগেবারী সিদ্দিকী সংগীতজীবনের প্রথম দিকে বংশীবাদক হিসেবে পরিচিত পেলেও পরবর্তী সময়ে তিনি একজন লোকসংগীতশিল্পী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।
২ দিন আগেতিনি ছিলেন একজন আদর্শবান শিক্ষক—অজিতকুমার গুহর এটাই সবচেয়ে বড় পরিচয়। নিজের জাগতিক উন্নতিকে কখনো বড় করে দেখেননি তিনি। শিক্ষার্থীদের আদর্শ জীবন উপহার দেওয়াই ছিল তাঁর ব্রত। তিনি সক্রিয় ছিলেন ঢাকার প্রগতিশীল সাহিত্য-সাংস্কৃতিক পরিসরেও। সুবক্তা হিসেবে তাঁর খ্যাতির কমতি ছিল না।
৫ দিন আগে